পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র
কমবে খরচ, চাষি পাবেন পাতার ন্যায্যমূল্য

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ০৩:১৮
দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। উপযুক্ত আবহাওয়া এবং মাটির উপযোগিতার কারণে গত ২৩ বছরে আবাদ শুধু বেড়েছে। এক সময়ের পতিত গোচারণ ভূমি এখন ভরে উঠছে চায়ের সবুজে। তবে দীর্ঘদিনেও চা নিলাম কেন্দ্র চালু না হওয়ায় পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষুদ্র চাষিরা। এ ছাড়া এখানকার কারখানায় উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য নিতে হতো চট্টগ্রাম আর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে। এতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ হতো। অবশেষে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন।
পঞ্চগড়ে চা বাগানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে উৎপাদিত চা আর চট্টগ্রাম-সিলেটে পাঠানো লাগবে না। এতে খরচ কমে আসবে। নিলাম কেন্দ্রে উন্মুক্ত কেনাবেচায় কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। এতে বদলে যাবে উত্তরের অর্থনীতি। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
পঞ্চগড়ে এখন ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। আটটি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগানের পাশাপাশি ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও চা চাষ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি বড় চা বাগান এবং আট হাজারের বেশি ক্ষুদ্র বাগান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এটি। ২০২২ মৌসুমে জেলার ২৫টি কারখানায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। এ শিল্পে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পঞ্চগড় সদরের ক্ষুদ্র চা চাষি কুদরত-ই-খোদা মুন বলেন, কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে তিন-চার বছর ধরে তাঁর মতো ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছিলেন না। দাম কম দেওয়ার পাশাপাশি ওজন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম দেখিয়ে দাম পরিশোধও করা হতো। নিলাম কেন্দ্র চালু হলে উপযুক্ত দাম পাবেন বলে আশা।
পঞ্চগড় সাজেদা রফিক চা কারখানার পরিচালক আরিফুজ্জামান সুমন বলেন, নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে চা কারখানা মালিকদের পরিবহন খরচ কমে যাবে। ভালো মানের কাঁচা পাতা কিনে উন্নত মানের চা তৈরি করতে পারলে লোকাল অকশন মার্কেটে ভালো দাম পাওয়া যাবে। চা পাতা উৎপাদনকারীরাও ভালো দাম পাবেন।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, গত বছরের ২৩ অক্টোবর সরকার পঞ্চগড়ে নিলাম কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়ার পরই কাজ শুরু করে চা বোর্ড। এরই মধ্যে ওয়্যার হাউস, ব্রোকার হাউজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপ তৈরিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, অনলাইনভিত্তিক নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে চাষিরা এক স্থানে বসেই চায়ের দাম কোথায় কী রকম চলছে, তা দেখতে পারবেন। উন্মুক্ত নিলাম হওয়ায় চা চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যের বাইরে কাঁচা পাতা কেনার আর সুযোগ থাকবে না। এতে উত্তরের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করি।
- বিষয় :
- চা পাতা
- চা
- চা নিলাম কেন্দ্র