ঢাকা সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বন্যা

বগুড়ায় ৯৫ ঘরবাড়ি নদীতে, জামালপুরে বন্ধ ২৮ স্কুল

বগুড়ায় ৯৫ ঘরবাড়ি  নদীতে, জামালপুরে  বন্ধ ২৮ স্কুল

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ইছামারা গ্রামে নদীভাঙনে বসতঘর ভেসে যায়। বৃহস্পতিবার তোলা -সমকাল

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে বগুড়া এবং জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বগুড়ায় ৯৫টি বাড়িঘর নদীতে ভেসে গেছে। জামালপুরে ২৮ স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে চোখে সরষের ফুল দেখছেন অসহায় মানুষ।
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্রোতে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সারিয়াকান্দির ইছামারা এলাকায় কমপক্ষে ৯৫টি বাড়িঘর নদীতে ভেসে গেছে। উদ্ধারকাজ চালানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে তারা আহাজারি করছেন।
সারিয়াকান্দি হাসনাপাড়া স্পার-২ এর মূল কাঠামোর সংযোগ স্থানে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যমুনায় ভাঙন শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ছয় শতাধিক জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকায় গত ১৫ দিনে কমপক্ষে ৭০০ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৯৫টি বাড়িঘর নদীর গ্রাসে চলে গেছে।
ইছামারা গ্রামের বিলকিস খাতুন বলেন, তাদের ঘরটি বুধবার রাতে হঠাৎ নদীতে ভেঙে যায়। তারা পাঁচ সদস্যের পরিবার আশ্রয়হীন পড়ে। সাঁতরে পাড়ে উঠলেও নদীতে মালপত্র ও ঘর ভেসে গেছে।

কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাছেদউজ্জামান রাছেল বলেন, গত বুধবার রাতে ফকিরপাড়া, ইদুমারা, ইটুমোড় এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, বাসিন্দাদের নিরাপদে যেতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।

জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি ওঠার কারণে ইসলামপুরে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক ও তিনটি মাধ্যমিক স্কুলের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির গতি তীব্র নয়। আগামীকাল থেকে পানি কমতে থাকবে। জামালপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা জানিয়েছেন, নদী-তীরবর্তী এলাকাগুলোতে রোপা আমন, আখ ও শাকসবজির ক্ষেতসহ ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। 

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদনদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। আর তিস্তা গত এক সপ্তাহ ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর, পোড়ার চর, খেয়ার আলগা, চর ভগবতীপুর, শিবের পাঁচি, চিড়া খাওয়ার চর, উলিপুরের বেগমগঞ্জ, মশালের চর, চিলমারীর নয়ারহাট, রমনা, শাখাহাতি চরগুলোর নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট তীব্র হয়েছে। লোকজন নৌকায় করে যাতায়াত করছেন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবার।

সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার কারণে চর যাত্রাপুরের নিম্নাঞ্চলগুলোর বাড়ির চারপাশে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে আবাদি জমি। পোড়ার চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘হামার ঘরত পানি উঠছে, মানুষের বাড়িত আশ্রয় নিছি আজ তিন দিন হলো। এক চুলায় রান্না করতেছি।’ খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা জহুরুল হক বলেন, ‘ঘরের ভিতর পানি ঢুকছে। সকাল থাকি ছোট বাচ্চাটার জ্বর।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির কারণে চর এলাকা সাময়িকভাবে প্লাবিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ৩৬২ টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।  

 


whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×