ফরিদপুর পৌরসভা
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি বহু গুণ

ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৭:০১
স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল এক দিনে ৫০ জনের বেশি জন্মনিবন্ধন ইস্যু করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে এই আদেশ কার্যকর হওয়ার পর থেকে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি বহু গুণ বেড়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিশুর টিকা দেওয়া, স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবার দাপ্তরিক কাজেই প্রয়োজন হয় জন্মনিবন্ধনের। এমনকি মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তির মৃত্যুসনদের জন্য এখন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এই সনদটি নিতে ফরিদপুরের পৌর এলাকার বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই ভোগান্তির সঙ্গে পাঁচ দিন ধরে যুক্ত হয়েছে ৫০ জনের বেশি জন্মনিবন্ধন ইস্যু না করার সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর পৌরসভার জন্মনিবন্ধন বিভাগ ঘুরে দেখা যায় সেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করে আছে জন্মনিবন্ধনের জন্য। সার্ভারের দুর্বলতা, অতিরিক্ত আবেদনের চাপ– এসব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ জনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার বিষয়টি।
যেখানে গড়ে প্রতিদিন ফরিদপুর পৌরসভায় দুইশর বেশি জন্মনিবন্ধনের আবেদন জমা পড়ে, সেখানে এখন প্রতিদিন মাত্র ৫০ জনকে দেওয়া যাবে এই সনদ। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৫০টির বেশি আবেদন অনিষ্পন্ন থেকে যাচ্ছে। এতে একদিকে বাড়ছে গ্রাহকের ভোগান্তি, অন্যদিকে সেবা নিতে আসা মানুষ চড়াও হচ্ছে পৌরসভার জন্মনিবন্ধন বিভাগের কর্মীদের ওপর। প্রতিনিয়ত চলছে উচ্চ স্বরে কথা বলা ও ঝগড়াবিবাদ।
১৫ থেকে ২০ দিনেও জন্মসনদ পাননি– এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিনই তারা আসেন, পৌরসভার লোকেরা বলে সার্ভারের সমস্যা।
জন্মনিবন্ধন সময় মতো না পেয়ে ক্ষুব্ধ কয়েকজন ব্যক্তিকে পৌরসভার ডেস্কে বসা কর্মীদের সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলতে দেখা যায়।
পৌরসভার কর্মীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সময় মতো তারা জন্মনিবন্ধন সরবরাহ করতে না পারায় সেবাগ্রহীতারা প্রতিনিয়তই অশোভন আচরণ করছেন। এটা নিয়ে তারা খুব বিপাকে আছেন।
এ সময় জন্মনিবন্ধন ডেস্কে কাজ করতে দেখা যায় রাবেয়া আক্তার, তন্ময়, নুসরাত, প্রিয়াঙ্কা, ফাল্গুনী, পপিসহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন হেনা বেগম (৬০)। বাড়ি শহরের লক্ষ্মীপুরে। জন্মনিবন্ধন পেতে কয়েক দিন ধরে ঘুরছেন জন্মনিবন্ধন নিয়ে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করবেন বলে জানালেন তিনি।
১৫ দিন ধরে স্বামীর মৃত্যুর সনদের জন্য জন্মনিবন্ধন পেতে ঘুরছেন ফরিদা পারভীন। তার বাড়ি ফরিদপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
শহরের পশ্চিম আলীপুরের বাসিন্দা মেহেদী হাসান দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন তাঁর সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য। তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে সারার টিকার সর্বশেষ ডোজ পেতে লাগবে সনদটি।
ফরিদপুর পৌরসভার সচিব তানজিলুর রহমান জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল এক দিনে ৫০ জনের বেশি জন্মনিবন্ধন ইস্যু করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে। কেন্দ্রীয় এই সিদ্ধান্তের কারণে জন্মনিবন্ধন নিতে আসা মানুষের ভোগান্তি বহু গুণ বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে জানুয়ারি পর্যন্ত হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে যাবে। এতে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে তাদের কর্মীদের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।