ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ঋণ, মামলা, পারিবারিক অশান্তিতে নিভে গেল জীবন

ঋণ, মামলা, পারিবারিক অশান্তিতে নিভে গেল জীবন

প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৯ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৯

ক্ষতির কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। ভারাক্রান্ত ছিলেন ঋণে। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছিল চেকের ভুয়া মামলা আর পারিবারিক অশান্তি। এর ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ আর সহ্য করতে পারেননি। এসব থেকে মুক্তি পেতে নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করা রোকন উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীর প্রতিবেশী এবং অন্য ব্যবসায়ীরা এসব তথ্যই জানান।

রোকন শুক্রবার রাতে শহরতলির চরশোলাকিয়া এলাকার ভাড়া বাসার আমগাছে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান তাঁর প্রতিবেশী অটোরিকশা ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন।

রোকনের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। লাশ নিয়ে সবাই হোসেনপুরের গোবিন্দপুরের বাড়িতে চলে গেছে। রোকনের স্ত্রী, এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছেলে আর পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ে রয়েছে বলে জানান প্রতিবেশী কামাল।

শহরের একরামপুর এলাকার মেসার্স আওলাদ মেশিনারিজের মালিক শেখ আসাদুজ্জামান খোকন জানান, রোকন তাঁর প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২০ বছর ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি খুব মেধাবী এবং চৌকস ছিলেন। প্রায় ১০ বছর আগে রোকন সেখান থেকে বেরিয়ে ওই এলাকাতেই ‘রোকন মেশিনারিজ’ নামে আলাদা ব্যবসা দিয়েছিলেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল। রোকনের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর করিমগঞ্জের শুধি এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ের পর সংসার সুখের হয়নি। স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন সব সময় প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন করত। এ ছাড়া ব্যবসার জোগান আর পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে রোকন বিভিন্ন ব্যক্তি, এনজিও ও ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিলেন। মিঠামইনের গোপদীঘি এলাকার এক ব্যক্তিকে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি চেকে ১২ লাখ টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা করে দিয়েছেন। এসব নিয়েও রোকন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।

এদিকে রোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রোকন মেশিনারিজের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ‘সুমন মেশিনারিজ’ এবং ‘এগো মেশিনারিজ’ নামে অন্য দোকান। সুমন মেশিনারিজের মালিক রনি জানান, ব্যবসায় মার খেয়ে রোকন তাঁর দোকানের চুক্তি নবায়ন না করে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। এর পরই তারা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। তিনিও রোকনের ব্যবসায় মার খাওয়া এবং মোটা অঙ্কের ঋণের কথা জানান। সবার ধারণা, ব্যবসা বন্ধ, পারিবারিক অশান্তি, ঋণ আর মামলার চাপেই রোকন আত্মহত্যা করেছেন।

শনিবার সকালে সদর থানা পুলিশ রোকনের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ।

আরও পড়ুন

×