বাঁধের ঠিকাদারিতে পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারী

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপকূল রক্ষা বাঁধের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতকাজে ঠিকাদারির অভিযোগ উঠেছে। নামসর্বস্ব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ নিয়ে তারা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মতে, শ্যামনগরের ১৫ নম্বর পোল্ডারে গৃহীত প্রকল্পগুলোর সিংহভাগ কাজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মূল ঠিকাদারের দেখা মেলে না। মূলত পাউবোর স্থানীয় অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া ফেরদৌস ও কার্য সহকারী তুষার বর্মণ ঠিকাদারের নামে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেন। পূর্বপরিচিত ও নিজস্ব ঠিকাদারের নামে শিডিউল কেনাসহ নিজেদের মনোনীত ‘দরে’ তারা সেগুলো জমা দেন। এ ছাড়া প্রকল্পের নিরাপত্তা জামানতের টাকা জমাসহ চুক্তি, প্রকল্পস্থল পরিদর্শনের মতো কাজগুলো তারা নিজেদের দায়িত্বে সম্পন্ন করেন। শুধু নাম-পরিচয় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যবহারের বিনিময়ে ঠিকাদারকে প্রকল্প অনুযায়ী একাধিক কিস্তিতে নির্দিষ্ট কমিশন দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত হওয়ায় তারা জবাবদিহির আওতায় আসছেন না। ফলে যেনতেনভাবে সম্পন্ন তাদের ওইসব প্রকল্প যেমন স্থায়িত্ব পাচ্ছে না, তেমনি একই অংশে নতুন বরাদ্দের প্রয়োজন পড়ছে।
দাতিনাখালীর মৎস্য খামারের মালিক উৎপল কুমার মণ্ডল জানান, মহসীন সাহেবের হুলো নামীয় এলাকার বাঁধে ২০২২ সালের অক্টোবরে ধস নামে। অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার একটি প্রতিষ্ঠানের নামে গত জানুয়ারি মাসে জাকারিয়া ও তুষারের নেতৃত্বে সেখানে মাটির কাজসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের কাজ হয়। তবে ছয় মাস পার না হতেই সেখানে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, অলি এন্টারপ্রাইজের নামে নতুন প্রকল্পের আওতায় জাকারিয়া ও তুষার সেখানে আবারও কাজ শুরু করেছেন।
একইভাবে পানখালী গ্রামের সোহাগ গাজীসহ কয়েকজন জানান, সেখানের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় গত মার্চ মাসে এক কিলোমিটার বাঁধে মাটির কাজ হয়। খুলনার একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ নিয়ে জাকারিয়া ও তুষার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। তদারকি ও ঠিকাদারির দায়িত্ব একই সঙ্গে পালনের সুযোগে তারা এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষে সেখানের প্রকল্প সম্পন্নের প্রতিবেদন দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আগস্টে মুন্সীগঞ্জ বাজারের স্লুইসগেট সংস্কার ও জুনে কলবাড়ী স্লুইসগেটসংলগ্ন অংশের ভাঙনরোধের কাজ সরাসরি জাকারিয়া ও তুষার সম্পন্ন করেন। কাজ শুরু করার পর প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে কাগজে-কলমে জাকারিয়ার পূর্বপরিচিত অলি এন্টারপ্রাইজের নাম ব্যবহার করা হয়েছে এ দুটি প্রকল্পে।
একইভাবে মুন্সীগঞ্জের কদমতলা ও পূর্ব দুর্গাবাটি (নজরুল ইসলামের হুলো) এলাকার ভাঙনকবলিত বাঁধ মেরামতে তারা একই ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তুষার বর্মণ বলেন, ঠিকাদারির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। অফিসের নির্দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দেখাশোনার জন্য সাইটে যেতে হয়। তাঁর অ্যাকাউন্টে মূল ঠিকাদারের পাঠানো কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন।’
উপসহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া ফেরদৌস বলেন, অনেক সময় জরুরি কাজের জন্য ঠিকাদার পাওয়া যায় না বলে কাজ শুরুর পর প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ঠিকাদারের মাধ্যমে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি নিজে কিংবা তুষার ঠিকাদারির সঙ্গে জড়িত নন। বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বদলির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পওর বিভাগ ১-এর শ্যামনগর উপবিভাগীয় কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, অফিসের লোকজন কাজ দেখাশোনার জন্য যাবে এটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে কিছু আছে কিনা তিনি বলতে পারবেন না। তবে অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের দায়িত্ব, কাজ করা না।