ধামরাইয়ের বাথুলি
৪ বছর বন্ধ ওজন পরিমাপক যন্ত্র

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাথুলিতে স্থাপিত ওজন স্কেলটি চার বছর বন্ধ রয়েছে - সমকাল
মোকলেছুর রহমান, ধামরাই (ঢাকা)
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৬:৫৩
ঢাকার ধামরাইয়ের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের কার্যক্রম চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রটির প্রায় ৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনেরও দেখা মেলে না। ফলে মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট ও চুরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওজন স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী যানবাহনের কারণে শ্রীরামপুর ও বারবারিয়ার দুটি সেতুতে ফাটল দেখা দিলে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সড়ক পুনর্বাসন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ধামরাইয়ের বাথুলিতে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। পরে ৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এর কার্যক্রম শুরু হয়। নর্থ স্টার রির্সোস অব গ্লোবাল (এনআরজি) লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।
এরপর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফের স্টেশনটি উদ্বোধন করেন। এরপর রেগনাম রিসোর্স সেন্টার লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নেয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপরও যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের নামে প্রতিষ্ঠানের ১৫-২০ জন শ্রমিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পণ্যবাহী যানবাহন ও কাভার্ড ভ্যান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনও চলে যায়। ২০২১ সালের শেষের দিকে ফের স্টেশনটি চালুর উদ্যোগ নেয় সওজ। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েক মাস চলার পর স্টেশনটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
রেগনাম রিসোর্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হোসেন জনি জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে যানবাহনের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে বাথুলিতে বসানো দুটি ওজন স্কেলের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি সিগন্যাল বাতি, দুটি ওয়েট ডিসপ্লে বোর্ড, জেনারেটর, চারটি কম্পিউটার, এয়ারকন্ডিশন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে। চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখন কোনো জনবল নেই। ফলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পথে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ওজন স্কেলে সওজ বিভাগের কাউকে পাওয়া যায়নি। মহাসড়কের দক্ষিণের ভবনে তালা ঝুলছে। তবে উত্তরে বাথুলি গ্রামের ৭০ বছরের ফুলমালা বেগমকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি জানান, দিনের বেলায় আব্দুল মান্নান ও জামান নামে দু’জন পাহারা দিলেও এদিন আসেননি। রাতে কেউ থাকে না।
স্থানীয় গাংগুটিয়ার ইউপি সদস্য রবিউল আউয়াল হাসু বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্টেশনটি নির্মাণ করেছে। কয়েক বছর চালু থাকার পর দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এভাবে বন্ধ থাকায় কোনো উপকার হচ্ছে না।
এদিকে ওজন স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ওজনের পণ্য নিয়ে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এতে মহাসড়কের দু’পাশ নিচু হয়ে গেছে। দেবে গেছে অনেক স্থানে। শ্রীরামপুর ও বারবাড়িয়ার পুরোনো দুটি সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় গত বছর নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা না হলে মহাসড়ক ও সেতু নষ্ট হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সরকারের উদ্যাগ ভালো। তবে স্টেশনটি চালুর পর যেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে হয়রানি না করা হয়। এর আগে অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরাফাত সাকলায়েন বলেন, ওজন স্কেলের যন্ত্রাংশ পাহারা দেওয়ার জন্য লোক রাখা আছে। তবে ওজন স্কেল বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ওজনের পণ্য নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। স্টেশনটি চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।