মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। এ বিভাগের জনবল কাঠামো থাকলেও নেই পদায়ন। উল্টো ওই বিভাগ থেকে চিকিৎসক বদলি করে অন্য হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত সেবাও পাচ্ছেন না রোগীরা।

উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের কারণে খড়কুটো জ্বেলে হতদরিদ্র মানুষ শীত নিবারণের চেষ্টা চালায়। অসচেতনতার কারণে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয় অনেকে। ফলে শীত এলে সাধারণ পোড়া রোগীর সঙ্গে রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বাড়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা। ভিড় বেড়ে যায় রোগী ও স্বজনের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ জুলাই রমেক হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু হয়। ১৪ শয্যা বিশিষ্ট এ বিভাগে তৎকালীন রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ পাঁচটি পদে চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। সেই সঙ্গে বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্সও ছিল। বার্ন ইউনিটে আউটডোর, ইনডোর, অপারেশনসহ সব ধরনের কার্যক্রম চলে। ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা ও পেট্রোল বোমায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক রোগী হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ওই সময় বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম দেখে সবাই প্রশংসাও করেন। ১৪ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন আইসিইউ, সার্জারিসহ অন্যান্য বিভাগ মিলে বর্তমানে ৩৫ শয্যায় এ বিভাগ উন্নীত হলেও বাড়েনি চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল ও সুযোগ-সুবিধা। ৩৫টি শয্যার বিপরীতে সারাবছর এ বিভাগে গড়ে ৪০ জনের বেশি রোগী থাকে। শীত এলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। রংপুর বিভাগের পোড়া রোগীদের অন্যতম ভরসার জায়গা হাসপাতালের এ বিভাগটি রয়েছে উপেক্ষিত। যেখানে এ বিভাগে জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদায়ন প্রয়োজন, সেখানে গত বছর বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলামকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়।

জনবল কাঠামোতে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, দু'জন রেজিস্ট্রার ও তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রার, একজন মেডিকেল অফিসার থাকলেও চিকিৎসক পদায়ন হয়নি। এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। বর্তমানে এ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এমএম হামিদ পলাশসহ কিছু শিক্ষানবিশ চিকিৎসক দিয়ে চলছে কাজ। চলতি শীত মৌসুমে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গত এক মাসে ওই ইউনিটে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ৮ নারী, দুই শিশুসহ মারা গেছে ১৩ জন। বর্তমানে আগুন পোহাতে গিয়ে পোড়া রোগী ২৬ জনসহ অন্যান্য মিলে মোট ৪০ রোগী চিকিৎসাধীন।

এ ইউনিটে চিকিৎসাধীন জয়পুরহাটের ফজিলা বেগমসহ (৫০) অন্যরা বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না সব সময়। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে কিছু শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এসে আমাদের খোঁজ-খবর নিয়ে যান।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এমএ হামিদ পলাশ জানান, বার্ন ইউনিটে ৯টি পদ থাকলেও শুধু আমি একাই কাজ করছি। তবে মাঝেমধ্যে আন-অফিসিয়ালি আরেকজন চিকিৎসক এসে কাজ করেন। আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সব সময় কাজ করছি। এ ইউনিটে পর্যাপ্ত আয়া ও ক্লিনার নেই। চুক্তিভিত্তিতে কিছু লোক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নার্সদের অন্য ওয়ার্ড থেকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়েছে। কিছু শিক্ষানবিশ চিকিৎসক দিয়ে এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদেরও পাওয়া যায় না।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, বার্ন ইউনিটের শূন্য পদে পদায়নের জন্য সংশ্নিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত শূন্য পদগুলোতে পদায়ন করা হবে।