- সারাদেশ
- কুড়িখাই মেলার মাছের হাট নজর কাড়ছে ক্রেতার
কুড়িখাই মেলার মাছের হাট নজর কাড়ছে ক্রেতার

মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের হাট আলাদা নজর কাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের - সমকাল
বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্প, পাঙাশ, মাসুল, বাঘাইড়- কী মাছ নেই এখানে! মাছের আকারও দেখার মতো। ৮ থেকে ৩০ কেজি ওজনের বিশাল বিশাল সব মাছ। বার আউলিয়ার অন্যতম হজরত শাহ সামসুদ্দিন আউলিয়া সুলতান বুখারীর (রহ.) ওরস উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলায় উঠেছে এসব মাছ। সোমবার শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় অন্যান্য সামগ্রীর পাশাপাশি বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে মাছের হাট। মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এই মাছের হাট আলাদা নজর কাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। নানা প্রজাতির মাছের চার শতাধিক দোকান বসেছে এই মেলায়।
মেলা ঘুরে দেখা গেল, ২৬ কেজির একটি বোয়াল মাছের দাম হাঁকা হয় ৪৩ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাছটি বিক্রি হয় ২৫ হাজার টাকায়। চিতল ও আইড় মাছের দাম ওঠে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। মাছ বিক্রেতারা জানান, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে এক সপ্তাহ আগে এসব মাছ সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রির জন্য আনা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ এই মেলা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে নিয়ে যান। ক্রেতার পাশাপাশি হাজারো মানুষ মেলায় আসেন মাছ দেখতে। এলাকায় মেলা উপলক্ষে বাড়িতে নতুন জামাই ও আত্মীয়স্বজনের নিমন্ত্রণের রীতি রয়েছে।
কথিত আছে, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বার আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারী (রহ.) প্রায় ৯০০ বছর আগে তার তিন সহচর শাহ কলন্দর, শাহ নাছির ও শাহ কবীরকে নিয়ে কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন। তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে এখানেই তার মাজার গড়ে ওঠে। তার মাজারকে কেন্দ্র করে ১২২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ওরস ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার মেলা শুরু হয়। এই মেলা কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত।
এলাকায় কথিত আছে, এই মেলার মাছ খেলে সব বালা-মুসিবত দূর হয়। মেলা-সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি বিশাল তামার পাতিলে তবারক রান্না আর বাউল-ফকিরের আসরের মধ্য দিয়ে এবারের মেলা শুরু হয়। চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে কাঠের আসবাবপত্রের দোকানপাট আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
এই মেলা ঘিরে আনন্দে মেতেছে আশপাশের সব এলাকার মানুষও। এলাকায় বছরের অন্যতম প্রধান উৎসব হয়ে উঠেছে প্রাচীন এই কুড়িখাই মেলা। মেলার উৎসব নিয়ে এলাকার পরিবারগুলো আগে থেকেই টাকা জমিয়ে রাখতে থাকে মেলায় খরচ করবে বলে। দূরবর্তী আত্মীয়-স্বজনকে মেলার বিশেষ দাওয়াত দেওয়া হয়। প্রতি বছর এলাকার ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ সপ্তাহব্যাপী মেলার উৎসবে মেতে থাকে।
মন্তব্য করুন