ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

খোঁজ মেলেনি মায়ের, কেঁদেই চলেছে ভাইবোন

খোঁজ মেলেনি মায়ের, কেঁদেই চলেছে ভাইবোন

স্বজনের কোলে দুই ভাইবোন- সমকাল

মনোজ সাহা, গোপালগঞ্জ

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ০৮:১৪

দুই সন্তানকে রেখে সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া গোপালগঞ্জের সেই গৃহবধূর সন্ধান মেলেনি এখনও; তার জন্য কেঁদেই চলেছে দুই শিশু সন্তান।

মঙ্গলবার দুই সন্তান নিয়ে গোপলগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী মধুমতি নদীর শেখ লুৎফর রহমান সেতু থেকে ঝাঁপ দেন আফরোজা খানম (২৩) নামের ওই নারী।

নিখোঁজ আফরোজার ভাবী ফাতেমা বেগম জানিয়েছেন, মাকে হারিয়ে দুই ভাইবোন আব্দুস সালাম (৪) ফাহমিদা ইসলাম (৬) সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ঘুমাতে পর্যন্ত পারছে না। পেটে ও মাথায় ব্যথা নিয়ে ছটফট করছে এই শিশু।

তিনি আরো জানান, দুই শিশু মোবাইল ফোনে তার বাবা আলিউজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মা বিদেশে তার কাছে গেছে কিনা- তারা তা জানতে চাইলে আলিউজ্জামান জানায়- তাদের মা বিদেশে তার কাছে আছে।

নদী থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া আফরোজা কোটালীপাড়ার সোনারগাতী গ্রামের বাকা তালুকদারের ছেলে ওমান প্রবাসী আলিমুজ্জামানের স্ত্রী। আফরোজার বাবার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। আফরোজা টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা গ্রামে ভাড়া বাড়িতে মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন।

আফরোজার মেয়ে ফাহমিদা জানায়, তাদেরকে ব্রিজের মাঝে নিয়ে তার মা বলে- নদীতে টাকা পড়ে গেছে। সে টাকা আনতে যাচ্ছে বলেই নদীতে ঝাঁপ দেয়। তার পর থেকে মাকে পাচ্ছেনা। এখন তারা বাঁশবাড়িয়া গ্রামে মামাবাড়িতে রয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি এ.এফ.এম নাসিম প্রতক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান,  ইজিবাইকে বোরকা পরা এক নারী মঙ্গলবার দুপুরে তার দুই সন্তান নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী মধুমতি নদীর শেখ লুৎফর রহমান সেতুর মাঝখানে আসেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানদের কাছে তার মোবাইল ও ব্যাগ রেখে মধুমতি নদীতে লাফ দেন তিনি।

তিনি জানান, সন্তানদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। এক ব্যাক্তি টুঙ্গিপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। এরপর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এ ঘটনায় একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে।

ওসি জানান, ওই গৃহবধূর স্বজনরা নদীতে তার মরদেহ খুঁজছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ফায়ার সার্ভিস ওই গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।

টুঙ্গিপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সরকার শরিফুল ইসলাম জানান, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। আমরা দুইটি ট্রলার নিয়ে নদীতে ওই গৃহবধূর সন্ধান করছি। ওই ট্রলারে আমাদের ডুবুরি দল রয়েছে। নদীতে মৃতদেহের কোনও আলামত পেলেই ডুবরি দলের সদস্যরা সেখানে নেমে মৃতদেহ উদ্ধার করবে। আমাদের উদ্ধার কর্মীদের সঙ্গে ওই গৃহবধূর স্বজনরা রয়েছেন।

আফরোজার বড় বোন মাকসুদা বেগম জানান, ২০১১ সালে তার বোনের বিয়ে হয়। সামান্য রাগ হলেই সে ক্ষেপে গিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইতো। এর আগেও সে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করেছে। 

তিনি বলেন, আফরোজার স্বামী ওমান প্রবাসী। মঙ্গলবার রাতে আফরোজাকে ৩ হাজার টাকা পাঠান তিনি। এই টাকায় তার বাজার, ঘরভাড়া ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয় বলে আফরোজা ক্ষোভ প্রকাশ করে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পরে বলে ধারণা করছি।


whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×