দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উদ্যোগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে চালু হলো দেশের প্রথম বিশেষায়িত ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক। 

বুধবার দুপুরে দিনাজপুর সদর উপজেলার ২ নম্বর সুন্দরবন ইউনিয়নের বীরগাঁ গ্রামের ফুলবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কয়েকজন কৃষকের গরুর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ এ ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। এ উদ্যোগে খুশি স্থানীয় কৃষকরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সামনে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিকের গাড়ির উদ্বোধন করেন বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবুল কাশেম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফজলুল হক, এগ্রিকালচার অনুষদের ডিন অধ্যাপক ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান, জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার, ভেটেরিনারি অনুষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক তাহেরা ইয়াসমিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

দিনাজপুরে বীরগাঁ গ্রামের ফুলবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর সেখানে কৃষক আনিছুর রহমানের একটি গরুর ঝংকা (আপওয়ার্ড প্যাটেলার ফিক্সেশন) রোগসহ তিনটি গুরুর বিভিন্ন রোগের অস্ত্রোপচার করা হয়। এ সময় কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, সাধারণত কোনো পশুর রোগ হলে আমাদের কয়েক কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এখন থেকে হাসপাতাল আমাদের বাড়িতে আসবে, বিষয়টি শুনতে অবাক করার মতো হলেও বাস্তবে দেখলাম। যদি এ কার্যক্রম চালু থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের মতো কৃষকরা উপকৃত হবেন।

এলাকার মফিজ উদ্দিন বলেন, কোনো গরু বা ছাগলের রোগ হলে তাকে আবার হেঁটে হেঁটে পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার যেসব প্রাণীর সমস্যা বেশি মনে হয়, সেগুলোকে কসাই কিংবা কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু যদি এভাবে হাসপাতালে খবর দেওয়ার পর তারা বাড়িতে এসে পশুর অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য বিষয় দেখেন, তাহলে তা অবশ্যই আনন্দের।

মাহবুবুর রহমান নামে এক কৃষক জানান, দেখলাম খুব ভালো করেই আমার গরুর চিকিৎসা দেওয়া হলো। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এজন্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ কার্যক্রম চলমান থাকুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এলাকার আব্দুস সামাদ বলেন, হাসপাতাল বাড়িতে আসছে। ফলে কষ্ট করে হাসপাতালে যেতে হবে না, টাকা-পয়সা কম খরচ হবে। অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে মূলত জেলার কৃষকদের কথা ভেবে। তারা স্বল্পমূল্যে সেবা পাবেন। গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা সাধারণত হাসপাতাল ছাড়া হয় না। এখন থেকে প্রত্যেক মানুষের দোরগড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে এ হাসপাতাল তাদের কাছে পৌঁছবে। পাশাপাশি এখানে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক থাকবেন, যাতে চিকিৎসা পেতে কোনো সমস্যা না হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মু. আবুল কাসেম বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি তার মধ্যে এটি অন্যতম। ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক (বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স) একটি নতুন ধারণা। মানুষের মতো করে প্রাণীরাও যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে লক্ষ্যেই এটি করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম। উদ্বোধনের পরই এর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিকের দ্বারা এ অঞ্চলের কৃষক ও খামারিরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন বলে আশা রাখছি। তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র, মৎস্য হ্যাচারি, ডেইরি ও পোলট্রি ফার্মের উদ্বোধন করা হয়েছে। কৃষক সেবা কেন্দ্র এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণসহ তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এবার ভ্রাম্যমাণ প্রাণী চিকিৎসালয়ও শুরু হলো।