- সারাদেশ
- কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানিতে ধস
কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানিতে ধস

খুলনার একটি খামারে কাঁকড়া সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত চাষিরা - এএফপি
করোনাভাইরাসের কারণে কাঁকড়া আমদানি বন্ধ রেখেছে চীন। এর ফলে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও ময়মনসিংহ এলাকায় উৎপাদিত কাঁকড়া বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি কুঁচিয়া রপ্তানিও বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কয়েক হাজার চাষি।
খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ করা হয়। এসব কাঁকড়া ঢাকার আড়তদাররা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নেন। ঢাকা থেকে এসব কাঁকড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন তারা।
জীবিত ও হিমায়িত দু'ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ কোটি ২৯ লাখ ২৭ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। এর বেশিরভাগই রপ্তানি হয়েছে চীনে।
কয়রা উপজেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘরামি জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে এ অঞ্চলে কাঁকড়ার ভরা মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এ সময় সরাসরি খামার থেকে কাঁকড়া কেনেন। ঢাকার রপ্তানিকারকরা এ মূহূর্তে কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একই সঙ্গে তাদের পাওনা টাকাও দিতে চাচ্ছেন না তারা। এতে উভয় দিক থেকেই বিপদে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
তিনি জানান, চীনে রপ্তানির জন্য কয়রা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন কাঁকড়া রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে পাঠানো হতো। আড়তদাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আড়তগুলোতে ব্যবসায়ীরা একপ্রকার হাত গুটিয়ে বসে আছেন। অন্যদিকে উৎপাদিত কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় কাঁকড়া খামারিরাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। অচলাবস্থা না কাটলে এ অঞ্চলের প্রায় চার হাজার ছোট-বড় খামারিকে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় কাঁকড়ার বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নরম খোসার কাঁকড়া এবং অন্য দেশগুলোতে স্বাভাবিক কাঁকড়া রপ্তানি হতে থাকে। শুরুর দিকে শুধু সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা হতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বর্তমানে খুলনা জেলার ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব এলাকা থেকে ছয় হাজার ৯৮৯ টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সাত হাজার টন কাঁকড়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের কাঁকড়া চাষি হেমন্ত ঢালী, সন্তোষ মিস্ত্রি, কামরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ শেখ ও কানাই মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে। এ কারণে এ দুই মাসে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করেন। ফলে দামও বেশি পাওয়া যায়। সবাই এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। তবে এবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে কয়রা উপজেলার চিংড়ি চাষিরা বাগদার পাশাপাশি কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েন। চিংড়িতে লোকসান হলে তা কাঁকড়ায় পুষিয়ে যায়। এভাবে এলাকার চিংড়ি চাষিদের মাঝে সচ্ছলতা আসছিল। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে এসে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে কয়েক হাজার চিংড়ি চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দীন হোসেন জানান, গত বছর এ উপজেলায় ৩১০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে দুই হাজার ১৯০ টন ও সুন্দরবন থেকে এক হাজার ১০৯ টন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। এলাকায় এবার কাঁকড়া চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাও দ্বিগুণ ধরা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক মজিনুর রহমান সমকালকে বলেন, খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া সরাসরি ঢাকা থেকে রপ্তানি হয়। এ জন্য কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে উৎপাদনের পরিমাণ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক চাষি রপ্তানি বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাগেরহাটে ব্যাপকভাবে কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। লোনা পানিতে শিলা জাতের কাঁকড়া চাষ করেন চাষিরা। কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম হওয়ায় প্রায় এক দশক ধরে এ জেলার কয়েক হাজার চাষি কাঁকড়া চাষ করছেন। লাভজনক হওয়ায় কাঁকড়া চাষে চাষিরা দিন দিন আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের সাত উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। এ জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় তিন হাজার টন। এক কেজি ফিমেল (নারী) শিলা কাঁকড়া ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার চাষিরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কাঁকড়া চাষি লুৎফর রহমান বলেন, লাভজনক হওয়ায় সাত থেকে আট বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ করছেন তিনি। পাঁচ বিঘা জমিতে এ বছর অন্তত ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে খামার থেকে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। কাঁকড়া বিক্রি শুরু হতে না হতেই চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ডিপো মালিকরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ রেখেছেন। বড় হয়ে যাওয়া পূর্ণ বয়সের এই কাঁকড়া বেশি দিন খামারে রাখা যায় না। ভরা মৌসুমে বিক্রি করতে না পারার কারণে খামারে প্রতিদিনই কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কবে এই কাঁকড়া বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় বলেন, কাঁকড়া উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। দেশের মোট রপ্তানির ৩০ ভাগেরও বেশি যায় এ জেলা থেকে। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে সরকার কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে না গেলে এখানকার চাষিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা এলাকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস মৎস্যঘের হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার বাজার। আগে সাতক্ষীরা থেকে দু'তিন দিন পরপর পাঁচ থেকে ছয় টন কুঁচিয়া ঢাকায় পাঠানো হতো। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সংগ্রহ করা কুঁচিয়া মরে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঋণ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়তদাররাও।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার কাঁকড়া চাষি আলাউদ্দিন জানান, কুঁচিয়া ও কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের সংসার পড়েছে সংকটে। অবিলম্বে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি করা না গেলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সাতক্ষীরার কয়েক হাজার মানুষ পথে বসতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুঁচিয়া ব্যবসায়ী অরবিন্দ বাছাড় বলেন, চীনে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর বাজার থেকে কেনা কুঁচিয়ার বড় অংশই মারা যাচ্ছে। ফলে তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন।
খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ করা হয়। এসব কাঁকড়া ঢাকার আড়তদাররা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নেন। ঢাকা থেকে এসব কাঁকড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন তারা।
জীবিত ও হিমায়িত দু'ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ কোটি ২৯ লাখ ২৭ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। এর বেশিরভাগই রপ্তানি হয়েছে চীনে।
কয়রা উপজেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘরামি জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে এ অঞ্চলে কাঁকড়ার ভরা মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এ সময় সরাসরি খামার থেকে কাঁকড়া কেনেন। ঢাকার রপ্তানিকারকরা এ মূহূর্তে কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একই সঙ্গে তাদের পাওনা টাকাও দিতে চাচ্ছেন না তারা। এতে উভয় দিক থেকেই বিপদে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
তিনি জানান, চীনে রপ্তানির জন্য কয়রা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন কাঁকড়া রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে পাঠানো হতো। আড়তদাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আড়তগুলোতে ব্যবসায়ীরা একপ্রকার হাত গুটিয়ে বসে আছেন। অন্যদিকে উৎপাদিত কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় কাঁকড়া খামারিরাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। অচলাবস্থা না কাটলে এ অঞ্চলের প্রায় চার হাজার ছোট-বড় খামারিকে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় কাঁকড়ার বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নরম খোসার কাঁকড়া এবং অন্য দেশগুলোতে স্বাভাবিক কাঁকড়া রপ্তানি হতে থাকে। শুরুর দিকে শুধু সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা হতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বর্তমানে খুলনা জেলার ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব এলাকা থেকে ছয় হাজার ৯৮৯ টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সাত হাজার টন কাঁকড়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের কাঁকড়া চাষি হেমন্ত ঢালী, সন্তোষ মিস্ত্রি, কামরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ শেখ ও কানাই মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে। এ কারণে এ দুই মাসে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করেন। ফলে দামও বেশি পাওয়া যায়। সবাই এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। তবে এবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে কয়রা উপজেলার চিংড়ি চাষিরা বাগদার পাশাপাশি কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েন। চিংড়িতে লোকসান হলে তা কাঁকড়ায় পুষিয়ে যায়। এভাবে এলাকার চিংড়ি চাষিদের মাঝে সচ্ছলতা আসছিল। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে এসে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে কয়েক হাজার চিংড়ি চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দীন হোসেন জানান, গত বছর এ উপজেলায় ৩১০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে দুই হাজার ১৯০ টন ও সুন্দরবন থেকে এক হাজার ১০৯ টন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। এলাকায় এবার কাঁকড়া চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাও দ্বিগুণ ধরা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক মজিনুর রহমান সমকালকে বলেন, খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া সরাসরি ঢাকা থেকে রপ্তানি হয়। এ জন্য কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে উৎপাদনের পরিমাণ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক চাষি রপ্তানি বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাগেরহাটে ব্যাপকভাবে কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। লোনা পানিতে শিলা জাতের কাঁকড়া চাষ করেন চাষিরা। কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম হওয়ায় প্রায় এক দশক ধরে এ জেলার কয়েক হাজার চাষি কাঁকড়া চাষ করছেন। লাভজনক হওয়ায় কাঁকড়া চাষে চাষিরা দিন দিন আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের সাত উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। এ জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় তিন হাজার টন। এক কেজি ফিমেল (নারী) শিলা কাঁকড়া ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার চাষিরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কাঁকড়া চাষি লুৎফর রহমান বলেন, লাভজনক হওয়ায় সাত থেকে আট বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ করছেন তিনি। পাঁচ বিঘা জমিতে এ বছর অন্তত ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে খামার থেকে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। কাঁকড়া বিক্রি শুরু হতে না হতেই চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ডিপো মালিকরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ রেখেছেন। বড় হয়ে যাওয়া পূর্ণ বয়সের এই কাঁকড়া বেশি দিন খামারে রাখা যায় না। ভরা মৌসুমে বিক্রি করতে না পারার কারণে খামারে প্রতিদিনই কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কবে এই কাঁকড়া বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় বলেন, কাঁকড়া উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। দেশের মোট রপ্তানির ৩০ ভাগেরও বেশি যায় এ জেলা থেকে। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে সরকার কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে না গেলে এখানকার চাষিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা এলাকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস মৎস্যঘের হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার বাজার। আগে সাতক্ষীরা থেকে দু'তিন দিন পরপর পাঁচ থেকে ছয় টন কুঁচিয়া ঢাকায় পাঠানো হতো। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সংগ্রহ করা কুঁচিয়া মরে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঋণ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়তদাররাও।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার কাঁকড়া চাষি আলাউদ্দিন জানান, কুঁচিয়া ও কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের সংসার পড়েছে সংকটে। অবিলম্বে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি করা না গেলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সাতক্ষীরার কয়েক হাজার মানুষ পথে বসতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুঁচিয়া ব্যবসায়ী অরবিন্দ বাছাড় বলেন, চীনে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর বাজার থেকে কেনা কুঁচিয়ার বড় অংশই মারা যাচ্ছে। ফলে তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন।
মন্তব্য করুন