-samakal-5e50edbb269a5.jpg)
ট্রাকে তোলা হচ্ছে কলার কাঁদি -সমকাল
দুই বিঘা জমিতে কলার বাগান করেছেন রাজশাহীর কাটাখালীর দুলাল হোসেন। বাগানে রোপণ করা ৮০০ গাছ থেকে কলা বিক্রি করে লাভ করেছেন দুই লাখ টাকা। তিনি বলেন, কলার বাগানে ঝামেলা কম, লাভ বেশি। টেনশন যেমন নেই, তেমনি লোকসানের ঝুঁকি ছাড়াই আবাদ করা যায়।
শুধু দুলাল নন, তার মতো রাজশাহীর প্রায় পাঁচ হাজার চাষি কলাচাষ করেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই কলা উৎপন্ন হয়। তবে পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও চারঘাটে কলার উৎপাদন বেশি হয়। এ বছর এক হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের ৬৩ হাজার টন কলা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, কলাচাষ এখন খুবই লাভজনক। কলার ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। প্রতি বিঘা জমিতে কলাচাষ করতে খরচ হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। লাভ হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সবরি বা অনুপাম বা মানিক কলার। সাগর কলার চাষও হয়, তবে তা পরিমাণে কম। ঢাকাসহ সারাদেশেই রাজশাহীর কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, জমি ছাড়াও পুকুর পাড়েই বেশি কলার আবাদ হচ্ছে। নতুন তোলা মাটিতে ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। তাই নতুন কাটা পুকুরপাড়কেই চাষিরা কলাচাষের জন্য বেশি বেছে নেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিচিকা গ্রামের খায়রুল ইসলাম ১০ বছর ধরে কলা বাগান করেছেন। নিজের পাঁচ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আরও জমি লিজ নিয়ে ১০ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। এক বছরের জন্য তিনি ১৫ লাখ টাকায় এ জমি লিজ নিয়েছেন। খায়রুল জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে ৫০০ কাঁদি কলা রাজশাহীর বানেশ্বর কলার হাটে বিক্রি করেন। গরমের সময় কলার কাঁদিপ্রতি দাম পেয়েছেন ৬০০ টাকা পর্যন্ত। শীতকালে দাম কিছুটা কম। তিনি বলেন, খরচ বাদ দিয়ে তার প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হয়।
পবার দাউদপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক এলাকার ২৬টি পুকুরপাড় লিজ নিয়ে সাত হাজার কলাগাছ রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, কাঁদি দেখে গাছপ্রতি ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা দাম পাওয়া যায়। গত বছর ১৩ লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছি। এবার আশা করি ভালোই লাভ হবে।
রাজশাহীর বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া কলার হাট এ অঞ্চলে বিখ্যাত। শনি ও মঙ্গলবার বানেশ্বর, সোম ও বৃহস্পতিবার বসে ঝলমলিয়া হাট। এসব হাট থেকে কলা কিনে ব্যবসায়ীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান। শুধু বানেশ্বরেই প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ হাজার কাঁদি কলা আমদানি হয়। সে হিসাবে দেখা যায়, গড়ে ৪০০ টাকা কাঁদি ধরলেও বানেশ্বর হাটেই এক কোটি টাকার কলার বেচাকেনা হয়। শীতকালে কম আমদানি হলেও গরমকালে কলার আমদানি বেশি হয়। প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক কলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
ঢাকার কলার পাইকারি ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, প্রতি হাটে গড়ে দুই হাজার কাঁদি কলা কেনেন তিনি। এরপর তা ঢাকার বিভিন্ন মোকামে পাঠান। সপ্তাহে তিন ট্রাক কলা ঢাকায় পাঠান তিনি।
কলার আড়তদার শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি হাটে ১০ থেকে ২০ হাজার কাঁদি কলা ওঠে। ঢাকা, সাভার, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কলা পাঠান তারা। শীতকালে ভালো কলা ২০০ থেকে ৬০০ টাকা কাঁদি এবং গরমকালে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কাঁদি বিক্রি হয়।
মন্তব্য করুন