'বর্তমান তরুণ প্রজন্ম দেশীয় সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছে। তারা বিদেশি সংস্কৃতিকে ধারণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, বাঙালিদেরও রয়েছে উন্নত সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য।' কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর সিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আয়োজন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একক চিত্র প্রদর্শনীর। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলার ইতিহাস, বাংলার সংস্কৃতিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।

শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মাঠে দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

প্রদর্শনীতে জাতির পিতার দুর্লভ অনেক চিত্র শোভা পেয়েছে। ফিদেল কাস্ত্রো, ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের অসংখ্য ছবি ছিল প্রদর্শনীতে। বিভিন্ন আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিসংবলিত ছবিও ছিল। সেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে দেশের বিখ্যাত নারী-পুরুষ, প্রতিষ্ঠান, দেশের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার জয়ীদের ছবি, আদিবাসীদের জীবনকাহিনি ও তাদের সংস্কৃতি। ছিল দেশীয় ফল, প্রাণী, খাদ্যশস্যসহ শ্রমজীবীদের জীবনচিত্র।

প্রদর্শনীতে ১৩০টি ফেস্টুন টানিয়েছেন শিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। পাশাপাশি তার লেখা 'পতিংবরা' উপন্যাসের উদ্ধৃতি সংবলিত ১৩০টি আলপনা। এর বাইরেও ছিল ছোট ছোট নানা চিত্র। বঙ্গবন্ধু কর্নার, দেশবন্দনা, ভাষা-শিক্ষা সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, সংস্কৃতি, রবীন্দ্র-নজরুল :বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ, বিশ্বের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ব্যানার্জি গ্যালারিসহ অসংখ্য গ্যালারিতে চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়।

ব্যতিক্রমী এই আয়োজন প্রসঙ্গে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সামনে। আবার এটি ভাষার মাস। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই আয়োজন। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়, এমনই বার্তা ছিল প্রদর্শনীটিতে। ইতিহাস, ঐতিহ্যসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হলেও এখানে সংস্কৃতিটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি আমার ষষ্ঠ আয়োজন। এর আগে বিভিন্ন জায়গা করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই প্রথম। এটি অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। আগামী ১৭ মার্চে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে আবার আয়োজন করব।

প্রদর্শনীতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা শ্রুতি বলেন, ভালো লাগছে এমন প্রদর্শনীতে এসে। অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী খোরশেদ আলম বলেন, ভাষার এই মাসে যতগুলো আয়োজন দেখেছি, এর মধ্যে এটিই আমাদের সেরা মনে হয়েছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি, বাংলা ভাষা ও বর্ণের গ্যালারিটি চমৎকার।