বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নতুন মুখই বেছে নিল বিএনপি। ফলে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকিরের সঙ্গে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত সাংসদ আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নানের।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জনের মধ্যে সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলামকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছিল। তিনি হঠাৎ করেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৯ জনের মধ্য থেকে সোমবার রাতে ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকিরের হাতেই ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের চিঠি তুলে দেন।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত সাহাদারা মান্নান বুধবার সকালে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। অপরদিকে বিএনপির আহসানুল তৈয়ব জাকির বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। আগামী ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।

বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান গত ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়। এর পরপরই ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রায় দেড় ডজনেরও বেশি নেতা দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অর্ধডজন নেতার মধ্যে থেকে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত এমপি আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নানকেই নৌকার কান্ডারি হিসেবে বেছে নেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর বিএনপি শিবিরে প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা জমে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনের নির্বাচনে সারিয়াকান্দি উপজেলার ভোটই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। কারণ নানা কারণে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে সেখানে উভয় দলে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। আওয়ামী লীগের শতভাগ নেতাকর্মী সাহাদারা মান্নানের পক্ষে প্রচারে নামবেন কিনা- এ নিয়ে যেমন স্থানীয় শাসক দলে সংশয় রয়ে গেছে, তেমনি টানাপোড়েন রয়েছে বিএনপিতেও।

প্রায় ৭ বছর আগে দলের ত্যাগী নেতৃত্বকে হটিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়া এবং সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় দলের একটি অংশ যেমন আড়ালে সাহাদারা মান্নানের সমালোচনায় মুখর, তেমনি সারিয়াকান্দির বাসিন্দা না হওয়ায় সেখানকার বিএনপি শিবিরেও দলীয় প্রার্থী আহসানুল তৈয়ব জাকিরকে নিয়ে কানাঘুষা আছে।

তবে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাশরাফি হিরো দাবি করেছেন, বগুড়া-১ আসনে নৌকার কান্ডারি সাহাদারা মান্নানের পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। তাছাড়া প্রয়াত সাংসদ আব্দুল মান্নান তার এলাকার উন্নয়নে যত কাজ করেছেন তাতে সাধারণ মানুষও নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাদারা মান্নান এর আগে সমকালকে বলেছেন, তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত আহসানুল তৈয়ব জাকির জানিয়েছেন, সারিয়াকান্দি বিএনপির সকল নেতাকর্মী ধানের শীষের পক্ষে। তিনি বলেন, 'মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই আমি সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলামের দোয়া নিতে তার বাড়িতে গিয়েছি। পাশাপাশি সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তবে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।'