- সারাদেশ
- চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ: সন্দেহে ‘নব্য জেএমবি’
চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ: সন্দেহে ‘নব্য জেএমবি’

প্রতীকী ছবি
চট্টগ্রামের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরিত বোমাটি ছিল হাতে তৈরি সময় নিয়ন্ত্রিত ইম্প্রোভাইজড এপপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। ঘটনাস্থল ও আলামত বিশ্নেষণ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। তারা সম্প্রতি ঢাকা ও খুলনায় ঘটা সাতটি বোমা হামলার ধরনের সঙ্গে এটির মিল পেয়েছেন। তাদের মতে, একই কায়দায় ঘটেছে এ ঘটনাও। ব্যবহৃত বিস্ফোরকও একই ধরনের।
জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন এমন কয়েক কর্মকর্তা বলেছেন, পুনর্গঠিত জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা নব্য জেএমবির সদস্যরা এই বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে শনিবার জানায় সাইট ইন্টেলিজেন্স। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি জঙ্গি হামলা বলে স্বীকার করতে রাজি হননি। তারা ঘটনাটিকে বলছেন, 'নাশকতা'।
অন্যদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন- ট্রাফিক পুলিশের ব্যবহূত সুরক্ষিত বক্সে কীভাবে বোমা রেখে গেল? এ ঘটনায় তারা পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা দেখছেন।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় নগরের পাঁচলাইশ থানার ২ নম্বর গেট পুলিশ বপে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হন। ঘটনার পর নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ বপ ও চেকপোস্টে 'সর্বোচ্চ সতর্কতা' জারি করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, 'সম্প্রতি ঢাকায় সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে এই বিস্ফোণের কিছুটা মিল রয়েছে। পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়নি।' তবে তিনি স্বীকার করেন, 'নাশকতার উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।'
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, 'এটি পরিকল্পিত নাশকতা। কারা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
হামলা ও বিস্ফোরকের ধরন একই: পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত বছর ঢাকা ও খুলনায় সাতটি বোমা হামলার মধ্যে পাঁচটির লক্ষ্যবস্তু ছিল পুলিশ। স্থান এবং সময়ও ছিল কাছাকাছি। এখানেও পুলিশকে লক্ষ্য করা হয়েছে, সময়ও রাতের প্রথম প্রহর এবং স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পুলিশ বপ। বিস্ফোরকও ব্যবহার করেছে আইইডি। কোনো সার্কিট পাওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত এটা হাতে তৈরি ও সময় নিয়ন্ত্রিত বোমা। এতে বোঝা যায়, এটি যারা ঘটিয়েছে তারা একই দল বা সেলের সদস্য। এটি জঙ্গিদের 'লোন উলফ' হামলা (একক হামলা) হতে পারে।
শনিবার সকালে ঢাকা থেকে অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের এএসপি শাওন কুমার সরকারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রাম পৌঁছায়। তারা বিস্ফোরণস্থল থেকে সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। বিস্ফোরণস্থল থেকে দুটি জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি পাইপের সঙ্গে গ্যাসভর্তি ক্যান বাঁধা ছিল। প্রচুর ধাতব বল উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরণস্থলের কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। রাস্তার অন্য পাশের একটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার হাসান মো. শওকত আলী সমকালকে বলেন, 'সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে এটাও একই সূত্রে ঘটেছে কিনা তা অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা খতিয়ে দেখছেন। একই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছে কিনা তাও তারা দেখছেন। এরপর নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে কারা এটি ঘটিয়েছে।'
বোমা রাখল কীভাবে: শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বিস্ফোরণের আগে পুলিশ বক্সে বোমাটি রাখা ছিল। অথবা আগের দিনই ২৭ ফেব্রুয়ারি নগর পুলিশের বিশেষ শাখা এক বার্তায় সব ইউনিটকে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন থাকার পরও তাদের সুরক্ষিত জায়গায় অপরাধীরা কীভাবে বোমা রেখে গেল? তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে। এ দায় তাদের ওপর বর্তায়।'
তবে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মো. শহীদুল্লাহ দাবি করেন, 'এগুলো তেমন সুরক্ষিত স্থাপনা নয়। শুধু ট্রাফিক সদস্যদের একটু বিশ্রাম, সিগন্যালের যন্ত্রপাতি, সিগন্যাল লাইট ও পোশাক রাখার জন্য অস্থায়ীভাবে এগুলো বানানো হয়েছে।'
অজ্ঞাত ব্যক্তি-গোষ্ঠীর নামে মামলা: বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা করেছে ট্রাফিক পুলিশ। শনিবার রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন ট্রাফিক পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে আসামি করা হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আশিকুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে সরকারি কাজে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে গুরুতর জখম ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানমালের ক্ষতিসাধন, সরকারি সম্পদ নষ্ট ও জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ বিস্টেম্ফারণ ঘটানো হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন