চাঁদপুরে জঙ্গল সাফ করে উদ্ধার করা মসজিদ সংরক্ষণের নামে সুলতানি আমলের এক গম্বুজ মসজিদটি এখন তার মূল চেহারাই হারাতে বসেছে। মসজিদের বাহির অংশে সংস্কার করতে গিয়ে প্রায় ৪০ ভাগ প্রাচীন ইট হাতুড়ি, কুড়াল এবং অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে কেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক চিহ্ন ফেলে সেখানে লাগানো হচ্ছে নতুন ইট। এই ভয়ানক কাজটি করছে খোদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরেরই প্রকৌশলীসহ তাদের একটি টিম। গত শুক্রবার সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামে মসজিদটির সংরক্ষণ কাজ দেখতে এসে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি এই অপরিকল্পিত সংস্কার কাজ বন্ধ করে যতটুকু ইটের দেয়ালের কাজ হয়েছে, সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। প্রায় এক ঘণ্টা অধিদপ্তরের পাঁচ-ছয় কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং দু-তিন প্রত্নতত্ত্ববিদকে নিয়ে  অবস্থান করার সময় তিনি বলেন, যারা এ ভুল ও দায়সারা কাজে জড়িত, তাদের সবাইকে এর জবাব দিতে হবে।

ডিজি বলেন, যে কাজ হয়েছে তা অনভিজ্ঞতা, উদাসীনতা ও অবিবেচনাপ্রসূত। জেনেশুনে সরকারি টাকাপয়সা জলে ফেলা হয়েছে। তার চেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন মসজিদের নিদর্শন জাফরি ইটগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাগ্যিস আমরা এসেছি, আরও পরে এলে বোধহয় মূল মসজিদও পেতাম না!

ডিজি স্পষ্ট নির্দেশ দেন, মসজিদটির একটি পুরোনো ইটও আর খোলা যাবে না। মসজিদ ঘিরে যে দুই নম্বর দেশি ইট দিয়ে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে, সেটিও ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন করে কাজ করতে হলে তাকে জানিয়ে তা করতে হবে। প্রয়োজনে তিনিই এ কাজের প্রধান তদারক থাকবেন।

তার সঙ্গে আসা প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ বলেন, পুরোনো কোনো ইটই খোলার কথা না। যেটি একটু খারাপ, সেটি ফেলে দিয়ে ওই রকম আকারের বিশেষ ইট লাগানো দরকার ছিল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আতাউর রহমান ও রাখি সাহা, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জামাল হোসেন, সদর ইউএনও কানিজ ফাতেমা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

প্রসঙ্গত, মসজিদটির সংরক্ষণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ৮ লাখ টাকার কাজ গত ২০ ডিসেম্বর শুরু হয়। কিন্তু বিষয়টি স্থানীয় কাউকে জানানো হয়নি। পরে লোকজনের কাছে জানতে পেরে রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন ডিজির কাছে অভিযোগ জানান।

২০১৮ সালের শেষের দিকে রামপুর ইউনিয়নের সন্তান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একটি বই পড়ে জানতে পারলেন, তার এলাকার প্রাচীন আমলের একটি ছোট এক গম্বুজ মসজিদ আছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে গত বছরই মন্ত্রণালয় এটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে গেজেটভুক্ত এটি সংরক্ষণে প্রাথমিক পর্যায়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।