সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু সন্তান ইয়াসিনকে হারিয়ে বাড়ির উঠানে চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মা রেহেনা খাতুন।

শনিবার এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানে নেত্রকোনার দূর্গাপুরে পিকনিকে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে অন্য তিনজনের সঙ্গে মারা যায় ইয়াসিন।

রোববার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে সরেজমিন ইয়াসিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানকে হারিয়ে তার মা রেহেনা খাতুন পাগলপ্রায়। বাড়ির উঠানে চিৎকার করে আহাজারি করছেন তিনি। চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরালেও পরক্ষণেই পুত্রশোকে আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

ইয়াসিনের বড় ভাই নয়ন মিয়া জানান, ছোট ভাই পিকনিকে যাবে বায়না ধরায় তারা সব ভাইয়েরা মিলে কিছু কিছু টাকা দেন। তার কাছ থেকে প্রথমে ৫০ টাকা নেয় ইয়াসিন। পরে শনিবার সকালে যাওয়ার সময় আরও ২০ টাকা দেন তিনি কিছু খাবার জন্য। হাসি মুখে বাড়ি থেকে আনন্দ ভ্রমণে গিয়েছিল তার ভাই।


তিনি বলেন, আদরের ছোট ভাইকে সরকারি চাকরিজীবি বানানোর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

স্বজনরা জানান, ইয়াসিন যখন মায়ের গর্ভে তখন কৃষক বাবা আবদুল মজিদ মারা যান। শেষ সন্তান ইয়াসনকি ঘিরে মায়ের স্বপ্নের শেষ ছিলো না। ভাই-বোনেরাও ছোট ভাইটিকে আদরে বড় করে তুলছিলেন। পড়ালেখা করিয়ে ইয়াসিনকে সরকারি অফিসার বানানোর স্বপ্ন ছিল ভাইদের। কিন্তু সব স্বপ্ন পিষে দিয়েছে ট্রাক। আনন্দযাত্রায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে ইয়াসিন।

শিশু ইয়াসিনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট ইয়াসিন। ইয়াসিন জন্ম নেওয়ার পর থেকে মা রেহেনা খাতুন অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলছিলেন ইয়াসিনকে।

পড়ালেখার জন্য ইয়াসিনকে ময়মনসিংহের একটি মাদ্রাসায় দেওয়া হয় শুরুতে। কিন্তু সেখানে পড়ালেখা না করায় বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় চলতি বছর।

শনিবার এলাকার অন্যান্য বড় ভাইদের সঙ্গে ইয়াসিনও নেত্রকোনার দূর্গাপুরে পিকনিকে যায়। কিন্তু তাদের বহনকারী খোলা পিকআপ ভ্যানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে ইয়াসিনসহ চারজনের মৃত্যু হয়।

রোববার বাড়ির কাছে শালীহর হাজী আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে ইয়াসিনকে দাফন করা হয়।