- সারাদেশ
- শোকে স্তব্ধ শালীহর গ্রাম
শোকে স্তব্ধ শালীহর গ্রাম

স্কুলের মাঠে মরদেহের গোসল সম্পন্ন শেষে মাঠেই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়- সমকাল
মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হয়েছিল ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে। তৎকালীন সময়ে 'লাশের মিছিল' দেখেছিল গ্রামটি। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পর ফের লাশের মিছিল দেখলেন গ্রামের মানুষ। চার স্কুল ছাত্রের একত্রে জানাজা সম্পন্ন হয় গ্রামের স্কুল মাঠে। শেষবারের মতো নিহতদের বিদায় জানাতে ভীড় করেন নানা বয়সী মানুষ।
শালীহর গ্রামের তিন শিক্ষার্থী ও পাশ্ববর্তী তারাকান্দা উপজেলার বিসকা গ্রামের এক দাখিল পরীক্ষার্থী পিকনিকে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন। নিহত চার স্কুল ছাত্রের মরদেহ রোববার সকালে শালীহর এলাকার হাজী আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। স্কুল মাঠের এক পাশে লাশের গোসল সম্পন্ন করে মাঠেই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই গ্রামে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে প্রাণ দিতে হয় ১৩ জন হিন্দু ও একজন মুসলিমকে। স্বাধীনতার সময় একত্রে এত লাশ দেখেছিল গ্রামের মানুষ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রোববার একত্রে চার লাশ দেখলেন গ্রামের মানুষ। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা চার স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুকে এলাকা জুড়ে বইছে শোক। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতক। সহপাঠীদের হারিয়ে বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলো- গৌরীপুরের ২ নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল ইসলাম খান হৃদয়, আবদুল হকের ছেলে ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য আরশাদুল হক, প্রয়াত আবদুল মজিদের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ইয়াছিন মিয়া, তারকান্দা উপজেলার বিসকা গ্রামের ছমির উদ্দিনের ছেলে দাখিল পরীক্ষার্থী মাহাবুল ইসলাম।
শনিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে নেত্রকোনার দুর্গাপুর-বিরিশিরি সড়কের কালামার্কেট (শান্তিপুর) এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হয় তারা। ছাত্রদের বহন করা খোলা পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে একটি ট্রাক্টরের সংঘর্ষ হলে কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যায়। ওই সময় দ্রুত গতির বালু বোঝাই ট্রাক পিষে চলে যায় ছাত্রদের। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন এবং দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ হাসপাতালে মারা যায় এক শিক্ষার্থী।
শালীহর হাজি আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. খায়রুল ইসলাম খান বলেন, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা আনন্দ ভ্রমণে যায়। কিন্তু দুর্ঘটনায় চার শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। স্বাধীনতার পরে একত্রে এত লাশ গ্রামের কেউ দেখেনি। এ বেদনা অনেক বড়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে শিক্ষার্থীরা লাশের মিছিলে যুক্ত হয়েছে। এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয়।
মন্তব্য করুন