- সারাদেশ
- ট্রাকের চাকা পিষে গেল হৃদয়ের স্বপ্ন
ট্রাকের চাকা পিষে গেল হৃদয়ের স্বপ্ন

রাকিবুল ইসলাম খান হৃদয়
নবম শ্রেণির ছাত্র হৃদয়। বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত টাকায় পড়ালেখা করছিল বাড়ির সামনের স্কুলে। বাবা-মা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে ছেলের পড়ালেখা ও সংসার খরচের টাকা জোগান। কষ্টার্জিত অর্থ বৃথা যেতে দেবে না বলে পণ করে হৃদয়। বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করতে চেয়েছিল সে। কথায় কথায় পুলিশ হব পুলিশ হব বলতো সবসময়। কিন্তু ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়েছে হৃদয় ও তার স্বপ্ন।
নেত্রকোনার দূর্গাপুরে পিকনিকে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের একজন রাকিবুল ইসলাম খান হৃদয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামের রমজান আলী খানের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম খান হৃদয় বড়। হৃদয়ের বাবা রমজান আলী ও মা ছাফিয়া খাতুন ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। হৃদয় বাড়িতে চাচা আনিছুর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে থেকে পড়ালেখা করতো।

রোববার সকালে তার বাড়ির কাছের বিদ্যালয় মাঠে হৃদয় ও অন্যদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। স্বজনদের আহাজারিতে তখন এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। হৃদয়ের বাবা রমজান আলী খান আহাজারি করে বলেন, ছেলে খালি বলতো পুলিশ হবে। তাই নিজেরা কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। যতদূর পড়তে চায় পড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একমাত্র ছেলে পুলিশ না হয়ে লাশের মিছিলে যুক্ত হবে ভাবতে পারেননি।
হৃদয়ের চাচা আনিছুর রহমান খান বলেন, হৃদয় পিকনিকে যাচ্ছে সেটি তারা জানতেন না। জানতে পারলে অরক্ষিতভাবে এমন আনন্দ ভ্রমণে কখনও যেতে দিতেন না। যে ছেলে পুলিশ হওয়ার স্বপ্নে পাগল ছিল তার লাশ আজ বাড়িতে। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
শালীহর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অন্য তিনজনের সঙ্গে হৃদয়ের জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
শালীহর এলাকার হাজী আমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও এ মোতালিব বেগ দাখিল মাদরাসার চলমান এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীরা আনন্দ ভ্রমণের উদ্যোগ নেয়। গত বিশ দিন ধরে গ্রামে চলতে থাকে প্রস্তুতি। এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা আনন্দ ভ্রমণে যাবে এই খবর পেয়ে গ্রামের কিছু ‘ছোটভাই’ বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়। ৪৬ জনের প্রত্যেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে শনিবার নেত্রকোনার দূর্গাপুর এলাকায় চিনামাটির পাহাড় দেখতে যায়। শনিবার রাত সোয়া নয়টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর-বিরিশির সড়কের কালামার্কেট (শান্তিপুর) এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হয় তারা। ছাত্রদের বহন করা খোলা পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে একটি ট্রাক্টরের সংঘর্ষ হলে কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যায়। ওই সময় দ্রুত গতির বালু বোঝাই ট্রাক পিষে চলে যায় ছাত্রদের। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন, দূর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ হাসপাতালে মারা যায় এক শিক্ষার্থী।
মন্তব্য করুন