- সারাদেশ
- মশারির মধ্যে মশারি টাঙাবেন না: ওবায়দুল কাদের
মশারির মধ্যে মশারি টাঙাবেন না: ওবায়দুল কাদের

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কাদের- সমকাল
নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দলের মধ্যে দল তৈরি করবেন না, মশারির মধ্যে মশারি টাঙাবেন না। পকেট কমিটি করবেন না। সুবিধাবাদীদের সুবিধা দেবেন না। দুঃসময়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। পকেটের লোকদের দিয়ে কমিটি করলে আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদীদের হাতে চলে যাবে। দলের দুঃসসময়ে তারা পালিয়ে যাবে।’
রোববার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। সম্মেলনে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে সভাপতি ও ডাবলু সরকারকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের কোন জায়গা হবে না। আজকে কেন যেন মনে হয়, আওয়ামী লীগে কর্মী কমে যাচ্ছে, নেতা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এত নেতার দরকার নেই। আমাদের আজকে সাচ্চা কর্মী দরকার। মঞ্চের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে কত নেতা! বিলবোর্ডে সুন্দর সুন্দর ছবি নেতাদের, লোকে চেনেও না। এমন অনেকেরই বিলবোর্ডে উজ্জ্বল, দৃশ্যমান ছবি দেখতে পাওয়া যায় ‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। আজকে আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলার বাতাসে আবারও ষড়যন্ত্রের গন্ধ, চক্রান্তের গন্ধ। সাম্প্রদায়িক অশুভশক্তি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এই অশুভশক্তি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ এখন তারা চক্রান্তের পথে সরকার হঠানোর ষড়যন্ত্র করছে। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশে আর যেন কোনোদিন সাম্প্রদায়িক শক্তি, অন্ধকারের শক্তি ক্ষমতায় না আসতে পারে সেই জন্য আওয়ামী লীগকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতিতে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাপিয়ন সন্ত্রাসী বিএনপিকে বাংলাদেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যে পার্টিকে কানাডার আদালত পর্যন্ত সন্ত্রাসী বলেছে, সেই পার্টিকে বাংলার মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ আরেক বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র হাওয়া ভবন দেখতে চায় না। এরা যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে সে জন্য আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
তিনি বলেন, যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাস করেন তাহলে দুর্নীতিকে না বলুন, সন্ত্রাসকে না বলুন, চাঁদাবাজিকে না বলুন, মাদকাসক্তিকে না বলুন। আদর্শের অনুসারী হন, তাহলে সেবার আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাবেন। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মুজিবাদর্শে আমাদের শপথ হবে, আমরা ত্যাগের মহিমায়, ভোগের লিপ্সা পরিহার করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগে কোন সুবিধাবাদী, দুর্নীতবাজ সন্ত্রাসীকে জায়গা দেব না। এক সময় রাজশাহীতে ১০০ জন কর্মী খুঁজে পেতাম না একটি কর্মীসভা করার জন্য। আজকে হাজার হাজার নেতাকর্মী তারুণ্যের উচ্ছ্বল আলোয় উদ্ভাসিত এ সম্মেলন কেন্দ্র। আধুনিকতার সঙ্গে বাস্তববাদিতার সংমিশ্রন ঘটিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। আজকে কেউ নিজস্ব বলয়, নিজস্ব সিন্ডিকেট সৃষ্টি করতে পারবেন না।’
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্ররাসা মাঠে এই সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নানক জাহাঙ্গীর কবির, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, ড. আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগ সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু ও বেগম আখতার জাহান। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
এছাড়াও অতিথি ছিলেন, রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-০৪ আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ ডা. মুনসুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগকে সতর্ক করলেন নানক:
সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সতর্ক করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক। বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছি, এরপর আর কোন নেতার সাথে পরিচিত হতে পারলাম না। আমরা যাদের নাম ঘোষণা করেছিলাম এর বাইরে কমিটি বিস্তৃত হয়নি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। অন্যথায় দলের সুবিধার্থে এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, যে যেই পদের যোগ্য তাকে সেই পদে দিতে হবে। কমিটি দিতে গিয়ে নিজের লোক খুঁজবেন না। যাদের কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর এত অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাদেরকে দলে ঢুকতেই দেয়া হবে না। দলের মধ্যে অভ্যান্তরীণ সমঝোতা থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন। এখন রাজনীতি না থাকায় জামায়াত আওয়ামী লীগে, শিবির ছাত্রলীগে ঢুকছে। তারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করে আওয়ামী লীগের দুর্নাম বয়ে আনছে। এদেরকে দল থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে।
মন্তব্য করুন