- সারাদেশ
- সিলেটে চাঁদা না পেয়ে সীমানা প্রাচীর ভাঙলেন কাউন্সিলর
সিসিক মেয়রকে আইনি নোটিশ ও পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ
সিলেটে চাঁদা না পেয়ে সীমানা প্রাচীর ভাঙলেন কাউন্সিলর
-samakal-5e5d2c2fed70f.jpg)
সিলেটে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর গোডাউনের সীমানা প্রাচীর ভাঙার অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের বিরুদ্ধে। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শামীম নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নিজের এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণের নামে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই তিনি মনির উদ্দিন আহমদের মালিকানাধীন গোডাউনের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেন। নগরীর সাগরদিঘির পাড়ের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ মনির উদ্দিন পূবালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক ও প্রবাসী। এ ঘটনায় তিনি বিমানবন্দর থানায় কাউন্সিলর শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র বরাবরেও আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি।
এতে মনির উদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, নগরীর চৌকিদেখি এলাকায় তার মালিকানাধীন গোডাউন (রংধনু-২২১) রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর শামীম দীর্ঘদিন ধরে তার গোডাউন জবরদখলের অপচেষ্টা করে আসছেন। পাশাপাশি শামীম ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ অবস্থায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর শামীম নিজের লোকজন নিয়ে এসে শ্রমিকদের দিয়ে গোডাউনের দক্ষিণ দিকের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেন।
মনির উদ্দিন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর শামীম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও অন্যের ভূমি জবরদখল করে আসছেন। এসব অভিযোগে মনির উদ্দিন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর শামীমসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে অভিযুক্ত করে বিমানবন্দর থানায় লিখিত অভিযোগপত্র দেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯০ বছরের বৃদ্ধ মনির উদ্দিনের পক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে আইনি নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রহমান। এতে নোটিশ ছাড়াই সীমানাপ্রাচীর ভাঙার কথা উল্লেখ করা হয়। কাউন্সিলর শামীম গোডাউনের পেছনে ভূমি ক্রয় করেছেন। এই ভূমিতে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই বলে কাউন্সিলর গায়ের জোরে আইন-কানুন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গোডাউনের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি মনির উদ্দিন সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে পৃথক লিখিত অভিযোগ দেন। এই অভিযোগের অনুলিপি সিলেটের মেয়র ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সিলেটের জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মনির উদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, 'আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর সড়ক প্রশস্ত করার জন্য অতীতে অনেক জায়গা ছেড়েছি। সেই সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজে এসে জায়গা চেয়েছেন। জনস্বার্থে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জায়গা দিয়েছি। এবারও নিয়ম মেনে এলাকার উন্নয়নে জায়গা দিতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম গায়ের জোরে নিজের স্বার্থে জায়গা দখল করেছেন। তিনি কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই লোকজন নিয়ে এসে শ্রমিকদের দিয়ে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দিয়েছেন।' গোডাউনের পেছন দিকেও কাউন্সিলরের বাধা ও হুমকির জন্য সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ আটকে আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া বা চাঁদাদাবির অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম সমকালকে বলেন, 'উন্নয়নের স্বার্থে সবাই জায়গা দিচ্ছেন। তার তো সামান্য জায়গা রাস্তার জন্য নেওয়া হয়েছে। এলাকার মসজিদের জায়গাও রাস্তার জন্য নেওয়া হয়েছে।' কাউন্সিলর শামীম দাবি করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সীমানাপ্রাচীর ভেঙেছে। মনির উদ্দিন আহমদ তাকে অভিযুক্ত করাকে 'বোঝার ভুল' বলে মন্তব্য করেন তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এলাকার চারবারের জনপ্রতিনিধি। এজন্য হয়তো তিনি আমাকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে তিনি কোনো অন্যায় করেননি বলে দাবি করেন কাউন্সিলর শামীম।
এদিকে মনির উদ্দিনের মালিকানাধীন গোডাউনের পেছনের সীমানাপ্রাচীর 'ঝুঁকিপূর্ণ' হওয়ায় তা নতুন করে নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন কাউন্সিলর শামীম। কাজে বাধার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন