করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে এরই মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ১০২ জনকে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন চট্টগ্রামবাসী। ছয় মেয়র প্রার্থীর পাঁচজনই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন স্থগিত কিংবা পেছানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এখনও চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ. রেজাউল করিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচন স্থগিতের মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। যদি এমন হয় তবে অবশ্যই তা কমিশন ভেবে দেখবেন।'

তবে নির্বাচন স্থগিত করতে বা পেছাতে ইতোমধ্যে কয়েকবার কমিশনকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দল। এমন পরিস্থিতিতে চসিক নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে আজ শনিবার বৈঠকে বসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্নিষ্টরা।

এবারের চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এমএ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা)।

এ বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনিতেই গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। করোনার কারণে তা আরও কমে আসতে পারে। আর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত করার কোনো বিকল্প নেই।'

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে সিইসি বরাবর শুক্রবার লিখিত আবেদন করেছে বিএনপি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এই চিঠি জমা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'যে কোনো মুহূর্তে দেশে করোনা পরিস্থিতি মহামারি হতে পারে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জনসমাগম না করতে বলেছেন। এতে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। নিরাপত্তার চেয়ে নির্বাচন কখনও বড় হতে পারে না। এ অবস্থায় নির্বাচন অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। অনেক আগেই এটি স্থগিত করা প্রয়োজন ছিল।'

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী এমএ মতিন বলেন, 'মানুষের জীবনের চেয়ে নির্বাচন কি বড় হতে পারে? তা ছাড়া ভোটারবিহীন নির্বাচন নয়, মানুষের ভোটেই আমরা জনপ্রতিনিধি হতে চাই। তাই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত দাবি করেছি।'

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম বলেন, 'যে কোনো মূল্যে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। না হলে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করব। নির্বাচন স্থগিত হলে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে।' অভিন্ন মন্তব্য করেছেন অন্য মেয়র প্রার্থীরাও।

এ প্রসঙ্গে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, নির্বাচন স্থগিতের দাবিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের চিঠি দিয়েছে। এ চিঠি সম্পর্কে কমিশনকে জানানো হবে।