'আঙ্কেল ভেতরে আসতে পারি?' কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা দুই কিশোরীর। পরে অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকেই তারা ওসির সঙ্গে একান্তে কথা বলার সুযোগ চায়। তাদের অনুরোধে পুলিশ অফিসারসহ দর্শনার্থীদের কিছুক্ষণের জন্য তার কক্ষের বাইরে যেতে বলেন ওসি।

সুযোগ পেয়েই কিশোরীরা ওসিকে জানায়, স্কুলে যাওয়ার পথে দুই বখাটে তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। এর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লজ্জায় বাবা-মাকেও তারা বলতে পারছে না, আবার সহ্যও করা যাচ্ছে না। ওসি বদিউজ্জামান নোটবুকে বখাটেদের নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে বলেছেন- তোমাদের অভিযোগ লিখে নিলাম। এখন বিকেল, তোমরা বাড়ি ফিরে খেলাধুলা করো। সন্ধ্যার মধ্যেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ।

ফিরে যাওয়ার সময় ওসির প্রতি ওই দুই কিশোরীর আবদার- আমাদের স্কুলে গিয়ে যে কোনো সমস্যায় পুলিশের সহায়তা নিতে বলেছিলেন বলেই আমরা এসেছি। আঙ্কেল, আমরা যে থানায় এসেছিলাম, তা যেন কেউ না জানে। এমনকি বাবা-মাও। ওসি বদিউজ্জামান তাদের মাথায় হাত রেখে বললেন, না, মামণি তোমরা নিশ্চিন্ত থাক। তোমাদের থানায় আসার কথা কেউ জানতে পারবে না।

বগুড়া সদরের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী বিশেষত কিশোরীরা এভাবেই জেগে ওঠা শুরু করেছে। সরাসরি থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করে নিজেদের সমস্যা জানাচ্ছে। যারা থানায় যেতে পারে না, তাদের ওসির সরকারি মোবাইল ফোনে পরপর দু'বার মিসড কল দিতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগগুলো সমাধানে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সদর থানার রেকর্ড অনুযায়ী, প্রতিদিন স্কুলপড়ূয়া অন্তত ১০ কিশোরী সরাসরি থানায় যাচ্ছে, নয়তো ওসির মোবাইল ফোনে সমস্যার কথা জানাচ্ছে। এর ফলে বগুড়া সদর থানা এলাকার সামাজিক অবস্থা পাল্টে গেছে। কমে আসতে শুরু করেছে যৌন হয়রানি এবং বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক নানা অপরাধ।

ওসি বদিউজ্জামান জানান, প্রায় দু'বছর আগে সদর থানায় যোগদান করার পর থেকে তিনি স্কুলগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। কখনও কখনও শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যৌন হয়রানি, বাল্যবিয়ে ও মাদকের কুফলগুলো নিয়ে কথা বলেন তিনি। এসব নির্মূলে করণীয়গুলো জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলোও তিনি গুরুত্ব দিয়ে শোনেন। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে দিয়েছেন নিজের ফোন নম্বর।

বগুড়া সদর থানা পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন সামাজিক নানা সংগঠন বিশেষত নারীদের উন্নয়নে কাজ করা সংগঠনের নেতারা। প্রোগ্রাম ফর ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী প্রধান মাহফুজ আরা মিভা বলেন, বগুড়া সদর থানার ওসি যেটা করছেন, সেটাই হলো আসল পুলিশিং। বাংলাদেশের সব থানার ওসিদেরই এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।