প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে কার্যত লকডাউন শিবচর উপজেলা। প্রশাসন কাগজে কলমে ঘোষণা না দিলেও রাস্তাঘাট, দোকানপাটে নেই জনসমাগম। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বাদে অন্যসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না কেউ। ফলে ব্যস্ত জনপদ এখন সুনসান রয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুক্রবার দুপুরের পর শিবচরের চারটি এলাকার প্রবেশপথ ও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এতে উপজেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো জেলাবাসী। 

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য ওই কঠোর নির্দেশনাগুলো গত বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৪ দিন মেনে চলতে হবে। এ সময়ে কেউ যোগাযোগ করলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করলেও পাশে থাকবে তারা।

মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে শিবচর উপজেলাকে। ফলে আতঙ্কিত এই জেলার অন্য উপজেলার মানুষও। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ বেশি। যদিও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের সূত্র মতে, প্রবাসীদের আনাগোনা বেশি থাকায় এবং তারা হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে না চলার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে এখন সবাই। ঝুঁকিপূর্ণ ৪টি এলাকা প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। শিবচর উপজেলায় প্রবাসী রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। গত ১৫ দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৬৬৪ জন এসেছেন এখানে, যার অধিকাংশই ইতালি প্রবাসী।

সম্প্রতি করোনা ঝুঁকিতে ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ শিবচরকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর শিবচর উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যায়। অবাধ বিচরণ ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের এই নির্দেশনা মেনে চলছে সাধারণ মানুষ। কোয়ারেন্টাইন না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি হোম কোয়ারেন্টাইন না মানে, তাহলে শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন। ওই সব এলাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে থাকবে পুলিশ। এ জন্য প্রায় ২৫০ জন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেখানে-সেখানে অবাধ বিচরণ ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।

তিনি আরও জানান, মাদারীপুরের চার উপজেলা, চার পৌরসভা ও ৬০টি ইউনিয়নে করোনা প্রতিরোধে কমিটি করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে একটি সেলও গঠন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

মাদারীপুরের সির্ভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছে অন্তত ৩ হাজারের বেশি প্রবাসী, যার অধিকাংশই শিবচর উপজেলার বাসিন্দা। যে কারণে এ পর্যন্ত যারা করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার বেশিরভাগই শিবচরের। তাই হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ২৬৩ জন, ৪ জন আইসোলেশনে ও একজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নূর-ই-আলম মিনা শুক্রবার শিবচর পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিবচর উপজেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জনসাধারণের বিশেষ প্রয়োজন হলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ সহায়তা করবে।