অন্য জেলা থেকে আসার কারণে কৃষ্ণপুর বর্মন পাড়ায় ঠাঁই হয়নি আন্দনী বর্মনের, যদিও বর্মন পাড়ায় যারা আছে তাদেরই মাথাগোঁজার ঠাঁই হয় কোনমতে।অন্যের জমির ফলের বাগান পাহারা দিয়ে টংঘরের ছাপড়িতে থাকেন আন্দনী আর তার প্রতিবন্ধী স্বামী জনাকু বর্মন।

সোমবার ভরদুপুরে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না আন্দনী বর্মনকে। ক্ষুধা নিয়ে শূন্য এক ভিটায় চুপচাপ বসে আছে তার দুই সন্তান জীবন ও ইমন। আনন্দীর খোঁজ নিতে গেলে জীবন জানায় মা বাবা খাবার আনতে গেছে সকালে, তোমরা খাওন আনছো বাবু? আমগো ঘরে খাওন নাই।অবশেষে অনাহারি আন্দনী আর জনাকু বর্মনকে খুঁজে পাওয়া গেল। হাতে তুলে দেওয়া হলো ৫০ কেজি চাল। মুহূর্তেই ক্ষুধার্ত মুখগুলো ভরে উঠলো হাসিতে।

গত ৩১ মার্চ সমকাল পত্রিকায় ‘বিপাকে শ্রমজীবীরা’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর, ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়ার কৃষ্ণপুর গ্রামের আন্দনী বর্মনের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। 

এরপর তার খোঁজ নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানকে বলা হয়। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি ফিরোজ তালুকদারকে কৃষ্ণপুর বর্মন পাড়ায় খোঁজ নিতে বলেন। বর্মন পরিবারদের মানবেতর অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক ওসি ফিরোজ তালুকদার তার বেতনের টাকা থেকে আন্দনীর বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে বর্মন পাড়ার অন্তত ৫০টি দুস্থ পরিবারকে ২৫ কেজি করে চালের বস্তা তুলে দেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল ইসলাম, আব্দুল খালেক মেম্বারসহ প্রমুখ।

চাল বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, ৩১ মার্চ সমকাল পত্রিকার লোকালয় পাতায় প্রকাশিত সংবাদটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে এবং তার দপ্তর থেকে এই বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ময়মনসিংহের এসপি মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের নির্দেশে আমি বর্মন পাড়ায় আজকে খোঁজ খবর নিতে আসি। খোঁজ খবর নিতে এসে দেখতে পাই তাদের মানবেতর জীবন। এরা এতই দরিদ্র যে কাজ না থাকায় তারা অনাহারে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একজন মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো, সরকারের তরফ থেকে কি দেবে না দেবে সেটা না ভেবে আমি আমার ব্যক্তিগত বেতনের টাকা থেকে এই দুস্থ অসহায় পরিবারগুলোকে আপাতত ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করলাম এবং এখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি আমি এসপি স্যারকে অবশ্যই বিস্তারিত জানাবো যাতে করোনার এই পরিস্থিতিতে জীবন ধারণে এই ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর কোন সমস্যা না হয়।

চাল পেয়ে বর্মন পাড়ার রুপালি বর্মন, বিদ্যা বর্মন,ইতি সাংমা বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আমাদের দুনিয়াতে কেউ নাই ভগবান ছাড়া, না এই দুনিয়ায় মানুষও আছে, আমাদের মত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ আছে। ওসি স্যারের ধন্যবাদ জানাই আমাদের ঘরে চাল দেওয়ার জন্য, এই চাইল না হইলে আমগো না খেয়ে থাকতে হইত। প্রধানমন্ত্রী যাতে আমগোমত গরীবের এই ভাবে সবসময় খোঁজ নেয়, ভগবান আমগর শেখ হাসিনা আপার মঙ্গল করুক।

মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান বলেন, উপরের নির্দেশে আমি ফুলবাড়িয়ার ওসিকে কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে বর্মন পরিবারদের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেছি।