- সারাদেশ
- শ্রীমঙ্গলে মুখ চিনে ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগ
শ্রীমঙ্গলে মুখ চিনে ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগ
অর্ধশত পরিবারে পৌঁছায়নি খাদ্য সহায়তা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও জনসমাগম এড়াতে শ্রীমঙ্গলে চলছে অঘোষিত লকডাউন। এতে শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়ার খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গত ১৫ দিন ধরে ঘরে বসে থাকলেও তারা পায়নি ত্রাণ। অর্ধশতাধিক পরিবারের কয়েকশ’ দরিদ্র মানুষের কাছে এখনও পৌঁছায়নি সরকারি কোনো খাদ্যসহায়তা।
অত্র এলাকায় মুখ চিনে ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এতে করোনা মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি যে খাদ্য প্রণোদনা কর্মসূচী, তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর ভাড়াউড়ার পূর্ব ও পশ্চিম ধারে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। পুরুষরা রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, দোকান শ্রমিক, দর্জির কারিগর এবং মেয়েরা ইট ভাঙ্গা শ্রমিক, কেউবা বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৩ এপ্রিল এলাকায় সরকারি সহায়তার ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এলেও অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবারের কপালে জোটেনি একদানা চালও।
সরেজমিনে ৩ নং সদর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে মাটির রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দেখা হয় মিনা বেগমের সাথে। স্বামী, ২ ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তিনি। মিনা বেগম বলেন, ‘এতদিন হলো স্বামী ও ছেলেরা বেকার ঘরে বসা, কাজ-কাম নাই। ৬ মাসের বকেয়া বাসা ভাড়া মাথায় নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। সরকার থেকে কত জায়গায় চাল-ডাল দিচ্ছে, অথচ আমাদের কপালে একটা দানাও জুটল না।’
মিনা বেগমের মতো একই এলাকার ডেইজি বেগমও জানালেন তার কর্মক্ষম ছেলেরা, তাদের বউ নিয়ে কয়েকদিন ধরে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর কথা। তিনি বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।
বিধবা মাসুক বেগমের রাজমস্ত্রি ছেলে ১১ দিন ধরে কাজের সন্ধানে মৌলভীবাজার গিয়ে আটকা পড়েছেন। ঘরে ছেলে বউ আর প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে নিয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে পরিবারটি। মাসুক বেগম বলেন, ‘শুধু শুনলাম সরকার চাল, ডাল, আলু দিচ্ছে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা নিয়ে রেখেছে চাল দেবে বলে, কিন্তু তার আর খবর নাই’।
পশ্চিম ধারের হাওরের রাস্তায় বসবাসকারী আমিন খানের ছেলে দিনমজুর কাউছার মিয়া জানান, চোখের সামনে ইউনিয়ন থেকে যাদের চলার সামর্থ্য আছে এমন অনেক মানুষকে চাল-ডাল দেওয়া হলো, অথচ আমরা গরিব মানুষ- আমাদের দেওয়া হলো না। মেম্বাররা মুখ চিনে চিনে চাল-আলু দিয়েছে।
কমিউনিটি ব্যাংকের নয়াপাড়া শাখার সিকিউরিটি কর্মী মো. তোতা মিয়ার স্ত্রী মিনি বেগম কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় স্বামী বাড়িতে ফিরতে পারেননি। কয়েকদিন ধরে ঘরে বাজার না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
এলাকার আম্বিয়া বেগম জানান, তার ছেলে টমটম চালাত। কয়েকদিন হলো শহরে যেতে পারে না। তিনি বলেন, সরকার থেকে নাকি খাবার দিবে। কিন্তু কাউকে তো এক ছটাক চাল নিয়েও আমার ঘরের দরজায় আসতে দেখলাম না?
সরকারি খাদ্য সহায়তা না পেয়ে এখানকার অনেক পরিবারের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এ সব মানুষের মধ্যে ফাতেমা বেগম, হারুন মিস্ত্রি, সমুজ মিয়া, মিনারা বেগম, খায়ের মিয়া, পাখি বেগম, নীলা বেগম, রানু, সিতারা বেগম, সানু মিয়া, তৌহিদ মিয়া, ডেইজি আক্তার, রাজন মিয়া, জাহানারা বেগম, আব্দুল বাসিত, রেবা খাতুন, জামাল মিয়া, মজিদ উল্লাহ, হারুন মিয়া, রাব্বুল মিয়া, সাদিকুর রহমান রিপন, পিরাণী বেগম, সালেহা খাতুন, আব্দুল হাকিম, শুকুর মিয়া, শেলী বেগম, মৌসুমি বেগম, রুশেনা আক্তার, জাফর ইসলাম, জাহাঙ্গির আলম, কামাল হোসেন, নেছাত্তর আলী, টিটু মিয়া, শাহানা বেগম, মরিয়ম বেগম, মাহমুদুল হাসানসহ শতাধিক পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। অনেকে এ ইউনিয়নের ভোটার না হওয়ায়ও ত্রাণ পাননি।
এ ছাড়া ভাড়াউড়া চা বাগানের ৫ নং বস্তির অনিয়মিত শ্রমিক পরিবারের সুচিত্রা দাশ, সবিতা দাশ, শ্রীতম দাশ, চন্দন দাশ, দুরপতি দাশ ও অনিতা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত সরকারি কোন খাদ্য সহায়তা পাননি।
এ দিকে ইউনিয়নে সরকারি খাদ্য বিতরণ ও নিবন্ধিত কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের তালিকায়ও রয়েছে নানা অসংগতি। অভিযোগ আছে, প্রকৃত দুঃস্থদের বঞ্চিত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছের লোকদের ভিজিএফ কার্ড ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় জানান, সদর ইউনিয়ন ছাড়া অন্য ইউনিয়নের ভোটারদের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার কোন নির্দেশনা নেই। ইউএনও অফিস থেকে তেমন কোন নির্দেশনা পাওয়া গেলে তাদেরকেও সহায়তা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নগুলো থেকে তালিকা আসবে। কেউ বাদ পড়লে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন