- সারাদেশ
- রামগতিতে টানা বৃষ্টিতে ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে
রামগতিতে টানা বৃষ্টিতে ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে

বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সয়াবিন ক্ষেত- সমকাল
গেল আমন মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ আঘাতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফসল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে রবি শস্য চাষাবাদ করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে টানা বৃষ্টি। দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এখন পানির নিচে। এ বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলতে থাকলে ২০ হাজার হেক্টর আবাদি জমির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা কৃষি সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ১৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সয়াবিন, দুই হাজার ৫শ’ হেক্টর চিনাবাদাম, ৬শ’ হেক্টর মরিচ, ১হাজার ৫০ হেক্টর মুগডাল, ২শ’ হেক্টর ফেলন ও ১ শ’৫০ হেক্টর মিষ্টি আলুসহ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সাত হাজার ৭শ’৫০ হেক্টর জমির সয়াবিন, ১ হাজার ২শ’ হেক্টর চিনাবাদাম, ৩শ’ হেক্টর মরিচ, ৫শ’৫০ হেক্টর মুগডাল, ও ৭৫ হেক্টর মিষ্টি আলুর ক্ষেত এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এখানকার দুই-তৃতীয়াংশ জমির আমন ধান নষ্ট হলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। এ ক্ষতি কাটিয়ে নিতে চলতি রবি মৌসুমে সয়াবিন, বাদাম, মরিচ, ভুট্টা ও মুগডালসহ বিভিন্ন ফসলের চাষবাদ করেন তারা। শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিলো। দুই সপ্তাহ আগেও ফসল ঘরে তুলবেন এমন অপেক্ষা করছিলেন তারা। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল হতে একটানা বৃষ্টি চলতে থাকায় অধিকাংশ ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যায়। পানির নিচে তলিয়ে যায় সয়াবিন, মরিচ, বাদাম, মুগডাল ও মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ফসলের গাছ হেলে পড়েছে, কিছু ফসল ঝরে পড়েছে; আবার কিছু গাছ ও ফসলে পচন ধরতে শুরু করছে। যে কারণে অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি এভাবে আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বাকী জমির ফসলও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন। ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে টানা বৃষ্টি কৃষকদের ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। করোনার পাশাপাশি ফসলের এ ক্ষতি তাদেরকে এখন করে তুলেছে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
উপজেলার চর গজারিয়া এলাকার কৃষক ফারুক মাঝি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’ গেল আমন মৌসুমে তার দেড় একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এতে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। এ ক্ষতি কাটিয়ে নিতে চলতি রবি মৌসুমে তিনি ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ১৬০ শতক জমিতে সয়াবিনের চাষ করেছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সয়াবিন ক্ষেতে এখন পানি জমে গেছে। এতে সয়াবিন গাছ বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে।
চেয়ারম্যান বাজার এলাকার মরিচ চাষী আবুল কালাম জানান, তার ৬০ শতক জমির মরিচ ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পানি নিষ্কাশনও করতে পারছেন না। এতে মরিচ গাছ হেলে পড়ে মরে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
চৌধরী মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, কৃষি কাজই তার একমাত্র পেশা। ঋণ করে ৪০ শতক জমিতে এবার মুগডালের চাষ করেছেন। বৃষ্টির পানিতে সেই মুগডালের ক্ষেত এখন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তিনি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন পলাশ বলেন, এ টানা বৃষ্টিতে সয়াবিন, মরিচ ও মুগডালের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। তাই যেসব ফসল ঘরে তোলার সময় হয়েছে সেগুলো দ্রুত ঘরে তোলার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, টানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে অর্ধেক আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি এভাবে অব্যাহত থাকলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন