- সারাদেশ
- বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত নার্স হাসপাতালে ভর্তি হলেন রিকশায় চড়ে
বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত নার্স হাসপাতালে ভর্তি হলেন রিকশায় চড়ে

বগুড়ায় করোনা পজেটিভ সরকারি হাসপাতালের এক নার্স কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই বৃহস্পতিবার বিকেলে রিকশায় চড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমনকি তার সঙ্গে থাকা ৫ বছরের ছেলে এবং শাশুড়িকে তিনি বাসা থেকে গোপনে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই নার্সকে বহনকারী রিকশাচালক এবং তার সংস্পর্শে যাওয়া ছেলে ও শাশুড়ির মাধ্যমে অন্যদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কোন সুরক্ষা ছাড়াই এভাবে তাদের গোপনে চলে যাওয়ায় উপশহর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ নজরদারির অভাবেই করোনা আক্রান্ত ওই নার্স এবং তার ছেলে ও শাশুড়ি গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাসায় থাকলে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ করা ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে না-এমন চিন্তা করেই তিনি হাসপাতালে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশায় নার্স ৩২ বছর বয়সী ওই নারী তার কর্মস্থল শহরের নিশিন্দারা উপশহর এলাকায় বক্ষব্যাধী হাসপাতালের কাছেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পাঁচতলা ওই বাড়ির নিচতলায় তিনি তার ৫ বছর বয়সী ছেলে এবং শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তার স্বামী মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে আসতেন।
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বুধবার বক্ষব্যাধী হাসপাতালে কর্মরত ওই নার্সের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে। গত ৩ মে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই নার্স আগে করোনা পজেটিভ তার ভগ্নিপতি, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত বোন এবং ১২ বছর বয়সী ভাগ্নের সংম্পর্শে গিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে সেখান থেকেই তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।
তবে পুলিশের রেকর্ড বলছে ওই নার্সের ভগ্নিপতিও কাউকে না বলে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গত ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় শহরের ফুলতলা এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরকোলা গ্রামের বাড়িতে ১২ বছর বয়সী ছেলেসহ তাকে পাওয়া যায়। পরে ফুলতলা এলাকার বাড়িতে থাকা তার স্ত্রী শজিমেক হাসপাতালের নার্স এবং গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ১২ বছর বয়সী ছেলের নমুনা পরীক্ষা করা হলে দু’জনই করোনা পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হন।
ওই নার্স যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ি মালিক স্বপন তালুকদার জানান, বুধবার রাতে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ এসে তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান। এরপর তারা ওই বাড়িতে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ লেখা একটি স্টিকার লাগিয়ে দেন এবং ওই বাড়ি থেকে কাউকে বাইরে বের না হতে এবং বাইরে থেকে যাতে কেউ প্রবেশ না করে সে জন্য সতর্ক করে যান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ওই নার্স আমাকে বলেন তিনি বাসায় থাকবেন না-হাসপাতালে যাবেন। তখন আমি তাকে বলি বিষয়টি প্রশাসনকে জানান। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমায় হাসপাতালে যেতে বলেছেন। তার মুখে এ কথা শোনার পর আমি নিকটবর্তী উপশহর ফাঁড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তখন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেন, তিনি (সেই নার্স) যদি যেতে চান তাহলে যেতেই পারেন। আমরা কেউ তাকে ঠেকাতে পারি না।
স্বপন তালুকদার জানান, বিকেল ৫টার দিকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ওই নার্স একটি রিকশা নিয়ে শহরের দিকে চলে যায়। এরপর আরেকটি রিকশায় তার ছোট ছেলে এবং শাশুড়িও রওনা দেন। পরে শুনেছি ওই নার্স মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আর তার ছেলে ও শাশুড়ি গ্রামের বাড়ি গাবতলীতে গেছেন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, করোনায় আক্রান্ত ওই নার্স একাই বিকেলে হাসপাতালে আসেন। তখন তাকে আমরা ভর্তি করে নিই।
ওই নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সুস্থ আছি। আমার মধ্যে কোন উপসর্গ নেই।
তিনি কিভাবে হাসপাতালে এলেন জানতে চাইলে নার্স বলেন, আমি একটি রিকশায় চড়ে এসেছি। অ্যাম্বুলেন্সে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পড়ে প্রোটেকশন নিয়েই এসেছি। তাছাড়া স্যার আমাকে হাসপাতালে আসতে বলেছেন। তবে তিনি সেই স্যারের নাম বা পদবী বলেননি। করোনা রোগীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ করা ১০ হাজার টাকা নিতেই কি তিনি এভাবে হাসপাতালে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, না আমি এসবের কিছুই জানি না।
বগুড়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ টিপু জানান, একজন করোনা রোগী গোপনে এভাবে রিকশায় চড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর শুনে এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, কোন রিকশায় তিনি চড়েছিলেন সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। এজন্য আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।
উপ-শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নান্নু খান বলেন, করোনায় আক্রান্ত ওই নার্স হাসপাতালে যাবেন এটা আমরা জানতাম। তখন আমরা মনে করেছি যে অ্যাম্বুলেন্স এসে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যে রিকশায় যাবেন সেটা জানতাম না। তাছাড়া তার মধ্যে করোনার কোন উপসর্গও ছিল না।
মন্তব্য করুন