- সারাদেশ
- আশ্রয়হীন হাজারো মানুষ, পানিতে ভেসে গেছে স্বপ্ন
সরেজমিন: খুলনা
আশ্রয়হীন হাজারো মানুষ, পানিতে ভেসে গেছে স্বপ্ন

খুলনার বটিয়াঘাটায় জোয়ারে ভেসে গেছে ভৈরব নদ তীরবর্তী ঘরবাড়ি - সমকাল
খুলনার বটিয়াঘাটা সড়ক দিয়ে শোলমারী নদী পার হলেই বটিয়াঘাটা বাজার। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উড়ে গেছে বাজারের বেশ কিছু দোকানের টিনের চাল। বাজারের কাছে পৌঁছাতেই কানে ভেসে এলো কান্নার শব্দ। নদীর দিকে যেতেই দেখা গেল সামান্য কিছু আসবাব ধরে বিলাপ করছেন এক নারী। দেখা গেল, পশুর নদের পাড়ে যে ক'টি কাঁচা দোকানঘর ছিল তার সবগুলোই ভেঙে নদীতে ভেসে গেছে। এর একটি ঘরেই পরিবার নিয়ে বাস করতেন কল্পনা রানী। ঝড়ের রাতে স্থানীয়রা অনেকটা জোর করেই তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। সকালে এসে দেখেন তার ঘর নেই। কল্পনা রানী বলেন, 'ঝড়ে ঘর তো নিছেই, ঘরের মাল-সামানা কিচ্ছু রেখে যায়নি। নতুন করে কোথাও যে থাকব তার উপায় নেই।'
বটিয়াঘাটা সড়ক দিয়ে দাকোপ উপজেলার দিকে যেতে পশুর নদতীরের প্রতিটি বাড়িই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ঘরেরই চাল উড়ে গেছে। গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেল অনেক বাড়ি। কয়রা উপজেলার অবস্থা আরও করুণ। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই এখন পানিতে তলিয়ে আছে। পুরো উপজেলা এখন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতো।
সরেজমিনে দাকোপ উপজেলার চালনা নোলোপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পশুর নদতীরে পাশাপাশি পাঁচটি ঘর ভেঙে গেছে। ভ্যানচালক আবুল কাশেম জানান, তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নদের তীরে বসবাস করেন। ঝড়ে তার ঘর ভেঙে গেছে। এখন পাশের সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দিনমজুর হেলাল হোসেন জানান, ঘর ভেঙে যাওয়ায় স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
পশুর নদে মাছ ধরে জীবিকা চলে আলেক শেখের। ঝড়ে ঘর ভেঙে যাওয়ায় দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় থাকবেন, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঘর ভেঙে যাওয়ায় একই অবস্থা জেলে মহসিনের। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা তিনি।
রাশিদা বেগম নামে এক বিধবা জানান, চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ঝড়ের সময় নদীর ঢেউ ঘরের নিচের মাটি সরিয়ে নিয়ে গেছে। এর ফলে ঘর পড়ে গেছে।
দাকোপের চালনা ওয়াপদা কলোনিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পশুর নদের তীরে দুটি ঘর ভেঙে পড়েছে। চারটি ঘরের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। ঘরগুলো কোনোমতে টিকে রয়েছে। সেগুলো আর বসবাসের উপযোগী নেই।
ভ্যানচালক আবদুর রহমান জানান, ঝড়ে তার ঘরের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে মেঝের মাটি নদীতে চলে গেছে। তার ছেলের ঘরটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। কেউ তাদের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। স্ত্রী ও সন্তানদের পাশের মাসুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারে রেখে এসেছেন।
চালনা থেকে বারইখালি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক স্থানে সড়কের বাম পাশ ধসে গেছে। বটবুনিয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের ইটের সলিং রাস্তাটি এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন