পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীর্ঘা ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের জন্য যে তালিকা পাঠানো হয়েছে ওই তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ইউনিয়ন থেকে প্রেরিত তালিকায় রয়েছে চাকরিজীবী ও স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের নাম। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী খেটে খাওয়া দিন মজুরদের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

পরিবারগুলোকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ওই টাকা মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দেওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিকাশ, রকেট, নগদ এবং শিওরক্যাশ। অর্থাৎ নগদ সহায়তা হলেও কাউকে নগদে টাকা দেওয়া হবে না।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার দীর্ঘা ইউপি চেয়ারম্যান আশুতোষ বেপারীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জগদিশ সরকার এ তালিকা প্রস্তত করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মন্টু লাল এদবার। তিনি বলেন, তালিকা প্রস্তুতে আমার কোন মতামত নেওয়া হয়নি। তবে তালিকা প্রস্তুত করার পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমাকে তাদের প্রস্তুত করা তালিকায় স্বাক্ষর করতে হয়েছে।

স্থানীয় নিরঞ্জন মালী জানান, তালিকায় থাকা যোগেন দেউরীর মেয়ে সরকারি চাকরিজীবী, কার্তিক বেপারীর ছেলে হাইস্কুলের শিক্ষক, পরিমল মন্ডল ও বিজয় অধিকারী ব্যবসায়ী তাদের বাড়িতে বিল্ডিং রয়েছে। এ ছাড়া চারটি পরিবার থেকে দেওয়া হয়েছে আট জনের নাম। প্রকৃত অর্থে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের নাম তালিকায় থাকার কথা রয়েছে, পুরো ইউনিয়নে ২০ ভাগ নামও তাদের নেই। সর্বপরি তালিকা প্রস্তুতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে।

জেলা পরিষদের সদস্য তুহিন হালদার তিমির বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষকে রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে দীর্ঘা ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ডে তা করা হয়নি।

অভিযুক্ত জগদিশ সরকার জানান, এই তালিকা সর্ম্পকে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান বিস্তারিত বলতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আশুতোষ বেপারী বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্যদের নিয়েই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা ও ভিক্তিহীন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইস্রাফিল জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। তালিকায় কোন অনিয়ম হলে তার দায়-দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের। এ উপজেলা ৯ টি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার পরিবার ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন।

ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, তালিকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা করেছেন। কোন অনিয়ম হলে তার দায়-দায়িত্ব তাদের। তবে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।