'আম্পান আমাগো পথে বসাই দেগেছ (দিয়ে গেছে)। এখন সাগরের সাথে মিশে আছি।' কথাগুলো বলছিলেন শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার নেবুবুনিয়া গ্রামের আবিয়ার রহমান। নেবুবুনিয়ার ভেঙে যাওয়া উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপর বসবাসরত শতাধিক পরিবারের এখন এমনই অসহায় অবস্থা। স্থানান্তরের মতো জায়গা না থাকায় আম্পানের আঘাতের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত অসহায় এসব পরিবার ভাঙনকবলিত ওই উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপরই অবস্থান করছে। ফলে তারা যে কোনো সময় বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাওয়া উপকূল রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ জায়গা পানিতে নিমজ্জিত। যেখানে যেটুকু জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে, সেখানে দুর্বল বাঁশ-খুঁটি দিয়ে কোনোমতে দোচালা ঘর তৈরি করে কাটাচ্ছে অসহায় পরিবারগুলো।
স্থানীয়রা জানান, বংশ পরম্পরায় তারা নেবুবুনিয়া এলাকার ভাঙনকবলিত বাঁধের পাশে বাস করে আসছে। এর আগে একাধিকবার ভাঙনে সহায়-সম্পত্তির সিংহভাগ নদীতে বিলীন হওয়ায় তারা বাঁধের কোল ঘেঁষে ভেতরের অংশে বাস করছিল। কিন্তু আম্পানের প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশের একপর্যায়ে নেবুবুনিয়ার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে টানা জোয়ার-ভাটার কারণে সংলগ্ন অংশে গভীর খাদের তৈরি হয় এবং স্থানীয়রা গাবুরাকে রক্ষার জন্য লোকালয়ের ভেতর দিয়ে রিং বাঁধ নির্মাণ করে। ফলে বসবাসরত শতাধিক পরিবার এখন চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নেবুবুনিয়ায় ভাঙনের কারণে স্থানীয়রা রীতিমতো খালের দু'পাশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় আমিরন বিবি, সালেহা খাতুনসহ কয়েক নারী জানান, পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করলেও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। ইতোমধ্যে কয়েকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার জানান, এভাবে আর কয়েকটি দিন চলতে থাকলে পরিবারগুলো নানা রোগে ভুগবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, পরিবারগুলোকে দ্রুত সরিয়ে না নিলে যে কোনো সময় নদীতে আবারও জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

বিষয় : আম্পানের প্রভাব

মন্তব্য করুন