লিবিবায় গুলি করে যুবক হত্যার ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় ৩ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে লিবিয়ায় গুলিতে মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের নিহত সুজন মৃধার বাবা কাবুল মৃধা বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় মানব পাচারকারী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের ওসমান শেখের ছেলে লিয়াকত শেখ ওরফে লেকু শেখ (৪৫), একই উপজেলার যাত্রাবাড়ী গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে রব মোড়ল (৪৫) ও মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের আ: মজিদ সরদারের ছেলে জুলহাস সরদারকে আসামি করা হয়েছে ।

কাবুল মৃধা জানান, গত ১ জানুয়ারি তার ছেলে সুজন মৃধা ও ভাগ্নে ফরিদপুর জেলার সালথা থানার আলমপুর গ্রামের কবির শেখের ছেলে কামরুল শেখকে ৮ লাখ টাকা ও মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদি গ্রামের কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া পাঠিয়ে ভাল বেতনে চাকরি দেবার পলোভন দেখান রব মোড়ল । এতে সম্মত হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার ও কালাম শেখ ৫০ হাজার টাকা  রব মোড়লকে দেন। পরে রব মোড়ল অপর দু’ আসামির কাছে এ টাকা পৌঁছে দেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিরা লিবিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখকে বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর ভারত থেকে দুবাই, কুয়েত ও মিশর হয়ে তাদের লিবিয়া পাঠানো হয় । গত ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। লিবিয়া যাওয়ার এক মাস পর চুক্তি ভেঙে লিবিয়া বেনগাজীর মিজদাহ শহরে নিয়ে সুজন, কামরুল ও ওমর শেখকে আটক করে। পরে মুক্তিপনের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। দালাল চক্রটি সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে নির্যাতনের ভয়েস ম্যাসেজ তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়।  পরে ম্যাসেজ পেয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যানের বিষয়টি আসামি ৩ জনকে জানালে তারা দাবিকৃত টাকা না দিলে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর গত ২৮ মে সুজন মৃধা ও কামরুল শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় ওমর শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন।

মুকসুদপুর থানার ওসি মীর্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, দুই যুবককে গুলি করে হত্যা ও অপর এক যুবককে গুলি করে আহত করার ঘটনায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে । কিন্তু আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে গোপালগঞ্জের মুকসদুপুর উপজেলার সুজন মৃধা রয়েছেন। মুকসুদপুরের অপর যুবক ওমর শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলির একটি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।