গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় পুলিশের পিটুনিতে নিখিল তালুকদার (৩২) নামে কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা করা হয়েছে। সালিশ বৈঠক থেকে নিখিলের পরিবারকে নগদ ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি ৩ লাখ টাকা ৫-৬ দিনে মধ্যে দেওয়া হবে বলে এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া এ বৈঠক থেকে নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার ও ছোট ভাই মন্টু তালুকদারকে চাকরি প্রদানের আশ্বাসও দেওয়া হয়।

শনিবার দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ ঘটনার মীমাংসা বৈঠক করা হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, পৌর মেয়র হাজী কামাল হোসেন শেখ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাবেক পৌর মেয়র এইচএম অহিদুল ইসলাম, রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বালা ও কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ লুৎফর রহমানসহ এলাকার অন্যান্য ব্যক্তিরা এ সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

কৃষক নিখিল কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের রামশীল গ্রামের নীলকান্ত তালুদারের ছেলে।

নিহত কৃষক নিখিলের ভাই শংকর তালুকদার বলেন, ‘যে যাওয়ার সে চলে গেছে। পরিবারের কথা ভেবে ও পরিবারের সবাই ভালো থাকতে পারে সেজন্য মীমংসায় সম্মত  হয়েছি। দুই লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি ৩ লাখ আগামী ৫-৬ দিনের  মধ্যে দেবে। পরিবারে দু’জনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছে।’

নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে চাকরির আশ্বাসে আমরা কোন অভিযোগ করিনি। তবে চাকরি না পেলে পরবর্তীতে অভিযোগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

নিখিলের পরিবারকে টাকা প্রদানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় নিখিলের স্মরণে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। সভার শুরুতে আমি ছিলাম। শোকসভা চলাকালীন সময়ে আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে কি হয়েছে, তা আমি জানি না।’

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, এ ঘটনার  মিমাংসার বিষয়টি ব্যক্তিগত। যে কেউ এটা করতে পারেন। এটি আমাদের তদন্ত বহির্ভূত বিষয়। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে- পুলিশ কর্মকর্তা কি কি আইন লঙ্ঘন করেছেন। তিনি কি কি অপরাধ করেছেন। আমরা মাঠে নেমে তদন্ত করছি। স্বাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করছি। তদন্ত কমিটি গঠন করার পর আমরা তদন্তে নেমে কাজ করছি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। আমরা আশা করছি ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো। আমাদের তদন্তে অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত  হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। সালিশ মীমাংসা করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

কোটালীপাড়ার রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বালা বলেন, ‘আমি এ সভায় উপস্থিত ছিলাম। সভায় নিখিলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে পুরো ঘটনা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। সালিশ বৈঠক থেকে নগদ ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিখিলের স্ত্রী ও ছোট ভাইকে একটা করে চাকরি দেওয়া হবে বলে সেখানে উপস্থিত থেকে শুনেছি।’

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি ও জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দোষী পুলিশ কর্মকর্তাকে রক্ষায় তৎপর অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে রামশীল বাজারের ব্রিজের পূর্ব পাশে নিখিলসহ ৪ জন বসে সময় কাটাতে তাস খেলছিলেন। এ সময় কোটালীপাড়া থানার এএসআই শামীম উদ্দিন ১ জন ভ্যানচালক ও ১ যুবককে নিয়ে সেখানে যান। গোপনে মুঠোফোনে তাস খেলার দৃশ্য ধারণ করেন। তারা বিষয়টি টের পেয়ে খেলো রেখে দৌড়ে পালনোর চেষ্টা করেন। এ সময় অন্য ৩ জন পালিয়ে গেলেও নিখিলকে এএসআই শামীম উদ্দিন ধরে মারপিট শুরু করেন। এক পর্যায়ে হাটু দিয়ে নিখিলের মেরুদণ্ডে আঘাত করেন শামীম। এতে নিখিলের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। তাকে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি বুধবার বিকেলে মারা যান। বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত ছাড়াই নিখিলের লাশ রামশীল গ্রামে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি।