মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে বরগুনা জেলার ১শ’ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ নামক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। 

বুধবার দুপুরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র পরিকল্পনায় বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জন শীলের সম্পাদনায় গ্রন্থটি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রশিদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা ।  

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ১৯৭১ সালে বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা শুধু বরগুনায়ই নয়, বরগুনা জেলার বাইরে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব স্মৃতি এবং ত্যাগের কথা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা প্রকাশনাটির মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করা হলো। আর বরগুনা জেলা প্রশাসনের এমন একটি মহতী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। 

মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বরগুনার অপার যোগাযোগ রয়েছে। ১শ’ জন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোক রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের অনন্য উপহার। এই বইটির মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরা হল। 

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে সংরক্ষণ ও তুলে ধরার লক্ষে বরগুনা জেলার ১ হাজার ৫০০ স্কুল, মাদ্রাসা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় বইটি সরবরাহ করা হবে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনার যেসব জায়গায় টর্চার শেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, মা-বোনরা যেসব জায়গায় সম্ভ্রমহানি হয়েছে সে সকল জায়গা সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য বরগুনাতে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। 

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বইটির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা স্মৃতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। যে রক্তের ঋণে আবদ্ধ এই বাংলাদেশ তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যই জেলা প্রশাসনের এই মহতী উদ্যোগ। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা আবারও ফিরে গিয়েছেন ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন দিনগুলোর কাছে।