করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শনিবার বিকালে নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি কনভেনশন সেন্টারটি আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। আইসোলেশন সেন্টারটি পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে ২৫০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে মৃদু উপসর্গের রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সমস্ত কিছু মনিটর করছেন, তার নির্দেশনাতেই সিটি করপোরেশনসহ আমরা সবাই কাজগুলো করছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদের দেশ উন্নত দেশ নয়, উন্নত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার উন্নত দেশ থেকে কম। এই মহামারি সামাল দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোও আগে থেকে প্রস্তুত ছিল না। যে কারণে সেখানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।’

তিনি বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো অতো মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নয়। এরপরও মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় সবকিছু বন্ধ ছিল। এখন সীমিত আকারে খোলা হয়েছে। কারণ জীবন এবং জীবিকা দুটিই রক্ষা করতে হবে। উন্নত দেশগুলোও মাসের পর মাস বন্ধ রাখেনি, সেখানেও খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখনও মানুষ মৃত্যুবরণ করছে করোনা ভাইরাসে। এখনো প্রতিদিন শত শত, হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এরপরও তারা লকডাউন শিথিল করেছে, কাজকর্ম শুরু করেছে। তার মানে এই নয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে যেভাবে চলতাম সেভাবে এখনো চলবো। আমরা কাজ করবো নিজেকে স্বাস্থ্যগতভাবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষিত রেখে, তাহলেই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠাই আমরা এই মহামারিকে মোকাবেলা করতে পারবো। 

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৌনে এককোটি মানুষের শহর চট্টগ্রাম। প্রতিদিন আরও বিশ লাখ মানুষ এখানে যাতায়াত করেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে চার হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুরুতে চট্টগ্রাম শহরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অনেক সঙ্কট ছিল। এখনও সঙ্কট কেটে গেছে তা নয়, সঙ্কট আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শুরু থেকে চেষ্টা করেছি বিভিন্ন হাসপাতালকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে আরো প্রসারিত ও উন্নত করার জন্য।

তিনি বলেন, শুরুতে এখানে কোন ভেন্টিলেশন সুবিধাই ছিল না করোনা রোগীদের জন্য। এরপরই জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেশনসহ এখন ১৫০ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ৪টি ভেন্টিলেশন সিস্টেম দিয়ে শুরু করেছে, সহসাই তারা ভেন্টিলেশন ১০টিতে উন্নিত করবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৬টি ভেন্টিলেটর আছে সেখানে আরো বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হয়েছে, সেখানেও সবগুলো ভেন্টিলেটর চালু করার চেষ্টা চলছে। ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। তাদের ২০টি ভেন্টিলেটর আছে। 

আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে সিটি কনভেনশন সেন্টারটি সিটি করপোরেশনকে দেওয়ায় সীকম গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী। 

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এই আইসোলেশন সেন্টারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, স্বাস্থকর্মী ও জনবল নিয়ে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই এখানে রোগী ভর্তি করা হবে। প্রথমত এই সেন্টারে মৃদু ও মাঝারী পর্যায়ের রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর হবে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতালসহ যেখানে আইসিইউ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা আছে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।’

সিটি কনভেনশন হল আইসোলেশনের পরিচালক ডা. সুশান্ত বড়ূয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী, ১৫ আনসার ব্যাটেলিয়নের পরিচালক এএসএম আজিজ উদ্দীন ও নগর পুলিশের উপ কমিশনার ফারুক উল হক।