
চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে টিনের খুপড়ি ঘর- সমকাল
চট্টগ্রামের ৪২ পাহাড়ে অবৈধ বসতঘর আছে প্রায় এক হাজার ১০০টি। এসব স্থাপনায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। বসতঘরের মধ্যে চার শতাধিক গড়ে উঠেছে রাতারাতি। করোনাকালে প্রশাসন অন্যদিকে ব্যস্ত থাকায় নানা কৌশলে এসব ঘর তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ঘর তোলার আগে কোথাও পাহারা বসানো হয়েছে আশপাশে। আবার কেউ কেউ রাতে মাটি কেটে দিনে তুলে ফেলেছে ঘর। কেউ কেউ রাতারাতি দিয়ে ফেলেছে ভাড়াও। গত তিন মাসে পাহাড়ে যে সংখ্যক অবৈধ ঘর উঠেছে, তা এযাবৎকালে সর্বোচ্চ। দখলদারদের অপতৎপরতায় হতবাক প্রশাসন। নতুন-পুরোনো সব অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করতে পরিদর্শককে দায়িত্ব দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি নামছে অভিযানে। ২২ ও ২৪ জুন করোনাকালে গড়ে তোলা সব নতুন স্থাপনা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। মাসব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান ২৫ জুন থেকে চালানো হবে পুরোনো স্থাপনাগুলোতে।
জানতে চাইলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা উপকমিটির আহ্বায়ক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগরের পরিচালক নুরুলল্গা নূরী বলেন, রাতারাতি এত অবৈধ স্থাপনা আগে কখনোই দেখা যায়নি। করোনার কারণে প্রশাসন ব্যস্ত ছিল অন্য কাজে।
এটিকে সুযোগ ভেবে যারা অবৈধ বসতঘর তুলেছেন, তাদের উচ্ছেদ করা হবে ২২ ও ২৪ জুন। ১২টি পাহাড়ে এমন ঘর উঠেছে চার শতাধিক। ২৫ জুন থেকে উচ্ছেদ অভিযান চলবে আগে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ৩০টি পাহাড়ে। সেগুলোতে আছে সাত শতাধিক স্থাপনা।
করোনাকালে ঘর উঠেছে চার শতাধিক : মূল দখলদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তৃতীয় একটি পক্ষকে দিয়ে রাতারাতি গড়ে তুলেছে চার শতাধিক ঘর। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, জঙ্গল সলিমপুর মৌজা, উত্তর পাহাড়তলী মৌজা এবং জঙ্গল লতিফপুর মৌজার বিভিন্ন দাগের পাহাড়েই সবচেয়ে বেশি নতুন ঘর তৈরি করছে দখলদাররা। এরই মধ্যে কয়েক দফা সরেজমিনে গিয়েছেন তারা। আলাদাভাবে কাজ করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকও। উচ্ছেদ প্রক্রিয়াও শুরু হবে শিগগির। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুরের একটি সিন্ডিকেট নতুন করে পাহাড় দখলে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরাই সবচেয়ে বেশি পাহাড় দখল করেছে গত তিন মাসে। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম-পরিচয় পেয়েছে প্রশাসন। বাকিদের পরিচয় বের করতে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
ঝুঁকিপূর্ণ ৩০ পাহাড়ে আছে সাত শতাধিক স্থাপনা : পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ে চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ৩০টি পাহাড়। দিনে নয়তো রাতে এসব পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে জনবসতি, দোকানপাট, ইটভাটা, শিল্পকারখানা। কেউ কেউ বানাচ্ছে সড়ক, আবাসন। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো হচ্ছে- সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়, টাইগারপাস-লালখানবাজার রোডসংলগ্ন পাহাড়, সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, মোজাফফরনগর পাহাড়, কাট্টলী থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোলপাহাড়, ইস্পাহানী পাহাড়, বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউটসংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলসংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপল্গয়িজ গার্লস স্কুলসংলগ্ন পাহাড়, ফয়'স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন পাহাড়, গরীবুলল্গাহ শাহ মাজারের পাশের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড়ের দিকের ফুলের দোকানগুলোর অংশ, পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন সিটি করপোরেশনের পাহাড়, এ কে খান অ্যান্ড কোং-এর পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়, কৈবল্যধামস্থ বিশ্ব কলোনির পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, লালখানবাজার চান্দমারি রোডসংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশের মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের পশ্চিমাংশ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাসংলগ্ন পাহাড়, লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড় ও সিডিএ অ্যাভিনিউ রোডের পাশে অবস্থিত বোসম গার্ডেনসংলগ্ন পাহাড়। এসব পাহাড়ের অধিকাংশেই নতুন ঘর উঠেছে করোনাকালেও।
মন্তব্য করুন