রাজবাড়ীতে করোনাভাইরাসে ইউএনও, ডাক্তারসহ একদিনেই ৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় রোববার পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ২০৬ জন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বালিয়াকান্দি হাসপাতালের পাঁচ ডাক্তারের মধ্যে তিনজনই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও তিন ডাক্তার আক্রান্ত। 

জেলায় এখন হুহু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাবি উঠেছে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের। 

জেলা সিভিল সার্জনের সূত্রমতে, শনিবার দুই দফায় প্রাপ্ত রিপোর্টে মোট ৫৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাফিন জব্বারসহ হাসপাতালের তিন ডাক্তার, কালুখালী উপজেলার তিন ডাক্তার, সাত স্বাস্থ্য কর্মী, গোয়ালন্দের একজন সাংবাদিক, একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। 

বালিয়াকান্দি হাসপাতালের পাঁচ ডাক্তারের মধ্যে তিনজনই আক্রান্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা। গত ১৫ জুন একজন ডাক্তার আক্রান্ত হওয়ার পরই হাসপাতালের জরুরি সেবা ছাড়া সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রোববার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আরও দুজন আক্রান্ত হওয়ায় এ সেবাও হুমকির মুখে পড়লো। 

করোনার ঝুঁকিতে থাকায় গত ১৫ জুন বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করা হলেও কার্যত তা মানা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই লোকজন ব্যবসা-বাণিজ্য, চলাফেরা সবকিছুই করে চলেছে। 

অন্যদিকে, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খোন্দকার আবু জালালসহ তিন ডাক্তার ও ১০ জন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত। 

কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খোন্দকার আবু জালাল জানান, নমুনা দেওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তাকে প্রতিদিনই হাসপাতালে কাজ করতে হয়েছে। নমুনা পজিটিভ হওয়ার পর আইসোলেশনে থেকে ফোনে যতটুকু কাজ করা যায় তা করছেন । হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্ব পালনকারী সবাই করোনায় আক্রান্ত। বিধায় দাপ্তরিক কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরি সেবা কোনোমতে চালু রাখা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নমুনা দেওয়ার ছয় থেকে সাতদিন পর রিপোর্ট জানা যাচ্ছে রাজবাড়ীতে। এতে করে সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। তাদের মতে, নমুনা দিয়ে আসা ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই ঘোরাফেরা করছেন। তার রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর জানা যাচ্ছে আক্রান্তের কথা। ততদিনে তিনি বহু মানুষের সংস্পর্শে যাচ্ছেন। এতে অন্যদের আক্রান্তের সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবার যার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। পরে যে তিনি আক্রান্ত হবেন না এর নিশ্চয়তা নেই। এসব কারণে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত  পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাজবাড়ীতে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি তাদের। 

রোববার সকাল পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০৬ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায়  ৬৯ জন, পাংশায় ২৮ জন, বালিয়াকান্দিতে ৪৫ জন, কালুখালীতে ৩০ জন ও গোয়ালন্দে ৩৪ জন। 

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম জানান, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে আউটডোর হবে না। বালিয়াকান্দিতে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। যেভাবে আছে সেভাবেই চালাতে হবে। পিসিআর ল্যাব চালুর বিষয়টি সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। জেলা পর্যায়ে এখনও চালু হয়নি। তবে সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। যারা নমুনা দিচ্ছে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এজন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে।