- সারাদেশ
- করোনার ভয়ঙ্কর বাস্তবতা আড়ালের অভিযোগ
করোনার ভয়ঙ্কর বাস্তবতা আড়ালের অভিযোগ

বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ‘সিলেটের সর্বস্তরের নাগরিকের পক্ষে’ এই স্মারকলিপি পেশ করা হয়- সমকাল
সিলেটে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য সিভিল প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও অবহেলার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
‘সিলেটের সর্বস্তরের নাগরিকের পক্ষে’ এই স্মারকলিপিতে সাক্ষর করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ২৮ জন নেতা।
বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সিলেটের প্রকৃত বাস্তবতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আড়াল করা হচ্ছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে দেওয়া এই স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন।
এই স্মারকলিপির অনুলিপি মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি, একই মন্ত্রনালয়ের সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ও সিলেটের সিভিল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট ৩ হাজার ৬৩১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে; যাদের মধ্যে এক হাজার ৯৪৪ জন সিলেট জেলার বাসিন্দা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এদের অধিকাংশ সিলেট নগরী ও সদর উপজেলার বাসিন্দা। নগরীতে মাত্র একশ শয্যার একটি সরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি অঞ্চলভিত্তিক জোনিংয়ের মাধ্যমে লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ১৫ জুন থেকে অধিক সংক্রমিত এলাকা হিসেবে নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ড রেড জোন হিসেবে লকডাউনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। জেলার মাল্টিসেক্টরাল কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি।
সিলেটে করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্মারকলিপিদাতারা। নগরীতে চিকিৎসার অভাবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সিলেট মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তারা।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া তারা পরিবর্তনের সুযোগ দেখছেন না বলে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে অন্তত তিনটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর ও কার্যকর নির্দেশনা প্রত্যাশা করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
এগুলো হচ্ছে- লকডাউন বা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা, পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় হাসপাতালের ব্যবস্থা করা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও লকডাউন বা লোকজনের বেপরোয়া ঘোরাফেরা বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ নেই। সিলেট নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার কোন না কোন এলাকা রেড জোনে পড়লেও প্রশাসন আশ্চর্যজনকভাবে নির্বিকার।
উপসর্গে ভোগা মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না অভিযোগ করে বলা হয়, সিলেটে করোনা শনাক্তে পর্যাপ্ত পিসিআর ল্যাব নেই। যে ল্যাব আছে, আন্তরিক হলে তাতেও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম সংখ্যক লোক নিয়েও যে পরিমান পরীক্ষা হচ্ছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজে চারগুণ লোকবল নিয়ে সমান পরীক্ষা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, বাস্তবতার বিচারে সিলেটেও করোনা চিকিৎসা ও আইসোলেশন সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। একমাত্র শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেখানেও পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন সুবিধা এখনো নেই। বেসরকারি দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার খরচ সাধারণের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া করোনার চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের আলাদা আবাসনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা সেবা শেষে বাড়িতে যাচ্ছেন এবং পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ খুব সহজেই সরকারি ডাকবাংলো বা বেসরকারি হোটেল-রেস্ট হাউজকে ব্যবহার করতে পারে প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে স্মারককারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, সিপিবি’র সাবেক জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য ও ওয়াকার্স পার্টির জেলা সভাপতি মো. সিকন্দর আলী।
এতে সাক্ষর করেছেন, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল। ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আফজাল রশিদ চৌধুরী ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব।
পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর, সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) প্রেসিডিয়াম সদস্য ভাস্কর রঞ্জন দাশ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক সেলিম।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে সিলেট স্টেশন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, খেলাঘরের সহ-সভাপতি অরূপ শ্যাম বাপ্পী।
নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদিদের মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর।
মন্তব্য করুন