- সারাদেশ
- আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগরে খাবার পানির তীব্র সংকট
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগরে খাবার পানির তীব্র সংকট

লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করছে স্থানীয়রা
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে সরকারি বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পানি বিতরণ করা হলেও বৃষ্টির শুরু থেকে তা বন্ধ রয়েছে। এতে এ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ চরম দুরাবস্থার মধ্যে দিন পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আম্পান তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দাতিনাখালী, বুড়িগোয়ালীনি, দুর্গবাটি ও কাশিমাড়ী আর গাবুরা ও পদ্মপুকুরের কিছু এলাকায় খাবার পানির সমস্যা মারাত্বক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সরেজমিনে গোলাখালী ও দাতিনাখালী আর কাশিমাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একটু খাবার পানির জন্য মানুষের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন হঠাৎ করে পানি দেয়া বন্ধ করে দেয়ায় অনেকে আকাশ দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায়ে আছেন।
দাতিনাখালী গ্রামের মরিয়ম খাতুন জানান, আম্পানে বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে কিছু মানুষ পানি দিত। কিন্তু ক’দিন ধরে বৃষ্টি শুরু হওয়াতে তারা আর পানি দেচ্ছে না।
ভাত না খেয়ে এক/আধ দিন কাটিয়ে দেয়া যায়, তবে পানি ছাড়া এক মুহুর্ত চলে না- উল্লেখ করে বুড়িগোয়ালীনির বাবু রাম মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলি হাড়ি পাতিল কলস নে পানি ধরে রাখতিছি। পরে ওই পানি দিয়ে কোন রকমে দিন কাটলেও সব সময় বৃষ্টি না হওয়ায় মাঝেমধ্যে পানির জন্যি খুব কষ্ট হচ্ছে।
পানি সংকট নিয়ে একই অভিযোগ করেন কাশিমাড়ীর রবিউল ইসলাম, জাহানারা বেগম শাহাজালাল মোল্যা আর দুর্গাবটি গ্রামের পরীক্ষিত মন্ডলসহ অনেকেরই। তারা জানান, কয়েক দিন আগেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান পানি বিতরণ কার্যক্রম চালু রেখেছিল। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে তারা আর পানি দিতে আসছে না।
অনেকের অভিযোগ করেছেন, পানি বিতরণ কার্যক্রমের সাথে জড়িতরা পরিবার প্রতি দিনে এক কলস পানি দিচ্ছে। কিন্তু পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিচেনায় না নেয়াতে বিতরণের পানিতেও তাদের সমস্যা মিটছে না। কেউ কেউ জানান, বিতরণের পানি সংগ্রহ করতে বাড়ি থেকে তাদেরকে তিন থেকে পাঁচ কিলো মিটার পথ পর্যন্ত পাড়ি দিতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি কিছুদিন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ওই এলাকায় খাবার পানি সরবরাহ করেছে। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে কোন পক্ষই আর পানি দিতে আসেন না।
খাবার পানির সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আম্পানের পর থেকে সরকারিভাবে প্রতিদিন প্রায় সত্তর হাজার লিটার পানি ভ্রাম্যমান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এক মাস পর্যন্ত ওই কার্যক্রম পরিচালনার পর লবণ পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকার টিউবওয়েলসমুহ উঁচু করার পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এনজিএফ ও সুশীলনসহ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত পানি বিতরণ চলছিল । তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি শুরু না হওয়া পর্যন্ত পানি সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন