- সারাদেশ
- চট্টগ্রামে ডাকাত চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে ডাকাত চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

ডাকাত চক্রের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা
ব্যাংকের আশপাশে সাধারণ মানুষের বেশে ঘোরাঘুরি করেন একজন। অপরাধীদের ভাষায় যার প্রতীকী নাম বেদী (সোর্স)। তিনিই ব্যাংকে টাকা তুলতে আসা লোকদের মধ্যে থেকে একজনকে টার্গেট করেন। দলের অন্য সদস্যরা একটু দূরে অবস্থান নেয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে টার্গেট ব্যক্তি বের হলেই বেদী পিছু নেন তার। সংকেত পেয়ে অন্যরাও তার পিছু নেয়। নির্জন স্থানে পৌঁছালে সবাই মিলে টার্গেট ব্যক্তিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চোখের পলকে কেড়ে নেয় টাকা। এরপর যার যার নিরাপদ স্থানে থাকেন কিছুদিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো একই কায়দায় নেমে পড়ে ডাকাতিতে।
এভাবে সিনেমার কায়দায় দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরে ডাকাতি ও ছিনতাই করে বেড়ালেও এই অপরাধ চক্রটি ছিল পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গত ১৬ জুন একটি ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এ চক্রটির হদিস পায় কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
শুক্রবার বিকেল থেকে রাতভর অভিযান চালিয়ে চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেল ও ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন-কুমিল্লার মুরাদনগর থানার হালিরচর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো. কামাল হোসেন, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর এলাকার মৃত ইউনুছের ছেলে মোক্তার হোসেন, সাতকানিয়া থানার দোলারপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল কবিরের ছেলে মো. সাদ্দাম, ফটিকছড়ি থানার দক্ষিণ ধুরুং গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে মো. শের আলী, আনোয়ারা থানার হাইলধর গ্রামের জহিরুল আলমের ছেলে মাসুদুর রহমান ও সীতাকুণ্ড থানার উত্তর সলিমপুর গ্রামের মৃত মো. শামছুল হকের ছেলে মো. এরশাদ।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা বলেন, গত ১৬ জুন দুপুরে ফারুক আহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এক্সিম ব্যাংকের সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা তোলেন। টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের গেটে তার সিএনজির গতিরোধ করে টাকা ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তে নেমে ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই ডাকাত চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, শুরুতে মাসুদকে শনাক্ত করে কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাসা থেকে একটি ও আনোয়ারা বৈরাগ এলাকা থেকে ডাকাতিতে ব্যবহারের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে নেওয়া আরেকটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াসা মোড় এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্র, গুলি এবং ছোরাসহ কামাল, মোক্তার, সাদ্দাম ও এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় শের আলী ও সাহাবুদ্দিন পালিয়ে যান। পরে ফটিকছড়ি থানা এলাকা থেকে শের আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে কামাল ও এরশাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে সোর্স হিসেবে কাজ করেন শের আলী। তিনি ছদ্মবেশে ব্যাংকের আশপাশে ঘোরাঘুরি করেন। অন্যরা আশপাশের এলাকায় গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকে। টার্গেট করা ব্যক্তি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বের হলে বেদী অন্যদের সংকেত দেয়। তারা টার্গেট ব্যক্তির পিছু নেয়। টার্গেট ব্যক্তি কোনো বাহন বা হেঁটে নির্জন এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল দিয়ে পথরোধ করে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে তারা। একবার ডাকাতির পর দীর্ঘদিন তারা বাসা-বাড়ি থেকে দূরে চলে যায়। টাকা ফুরিয়ে আসলে আবারো ডাকাতির পরিকল্পনা করে। দীর্ঘদিন ধরে তারা একই কায়দায় অপরাধ কার্যক্রম করে আসছিল।
মন্তব্য করুন