মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় গরিবের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৪২ জন কার্ডধারীর চাল প্রায় চার বছর ধরে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ডিলার আব্দুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে। 

নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার হুবহু ঠিক রেখে এই ৪২ জনকে দুই বার করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন তালিকা করার সময় বিষয়টি ধরা পড়লেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ডিলার আর খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তালিকা প্রস্তুতকারীরাই এই কারচুপির সঙ্গে জড়িত।

সরেজমিনে যাচাই করে দেখা গেছে, ২৮৭,২৮৮ এবং ২৮৯ ক্রমিকে কার্ডধারী সরলা বেগম একই ব্যক্তি। তিনি ২৮৮ ক্রমিকের কার্ড দিয়ে চাল উত্তোলন করলেও অন্য দুটি ক্রমিকের কার্ডের চাল আত্মসাৎ করেছেন ডিলার। আবার ২৯০ ক্রমিক থেকে ৩০৬ ক্রমিক পর্যন্ত  ১৬ জন কার্ডধারী নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে আরেক ডিলার নাজমা বেগমের ৫২৪ থেকে ৫৪০ ক্রমিকে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ্ই ১৬ জন কার্ডধারী নাজমা বেগমের কাছ থেকে চাল উত্তোলন করেন। 

ডিলার আব্দুস সালাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকার ১ নম্বর ক্রমিক থেকে ৩৪০ ক্রমিক পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৪০ জন কার্ডধারীর চাল বিতরণ করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে,  ১২২ ক্রমিক থেকে ১৪২ ক্রমিক পর্যন্ত ২০ জন কার্ডধারীদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র একই রেখে ২০০ ক্রমিক থেকে ২২০ ক্রমিকে  আরও ২০ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০ জন কার্ডধারী চাল উত্তোলন করলেও বাকি ২০ জনের চাল ডিলার আত্মসাত করেছেন।

জানা গেছে, বরাইদ ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট। পরবর্তীতে সংশোধন করা হয় ২০১৭ সালের ৮ মার্চ। কিন্তু তারপরও ৪২ জনের নাম দুইবার করে তালিকাভুক্ত করা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

ডিলার আব্দুস সালাম আজাদ তালিকার ক্রটির কথা স্বীকার করে বলেন, ভুল হয়ে গেছে। তবে তিনি বলেন, কার্ড না থাকলেও চেযারম্যানের তালিক অনুযায়ী ৩৪০ জনকেই চাল বিতরণ করেছেন। 

বরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ তালিকায় কয়েকজনের নাম দুইবার আসার বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, প্রথম তালিকায় ত্রুটি ছিল। পরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে নতুন তালিকা করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে সাটুরিয়ার ইউএনও আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। চাল আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাটুরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শফিকুল আলম সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।