- সারাদেশ
- চট্টগ্রামে তিন তরুণের ব্যতিক্রমী অনলাইন ক্লাসরুম
করোনাকাল
চট্টগ্রামে তিন তরুণের ব্যতিক্রমী অনলাইন ক্লাসরুম

করোনা মহামারির কারণে আগামীতে বিশ্বে অনলাইননির্ভরতা বেড়ে যাবে বহুগুণ। যা ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক সংস্থাও ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি এখন সময়ের দাবি। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা অনলাইন ক্লাসরুমের মতো ভিন্নধর্মী চিন্তাকে সামনে নিয়ে মাঠে নামেন চট্টগ্রামের তিন তরুণ। তারা হলেন নূর উদ্দিন, আশরাফ রেজা ও হায়দার আলী। এরা প্রথমবারের মতো প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করেছেন আলাদা আলাদা অনলাইন ক্লাসরুম! নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে একটি ওয়েবসাইট। প্রত্যেক শিক্ষককে দেওয়া হবে পৃথক প্যানেল। শিক্ষকরা তাদের তৈরিকৃত টিউটোরিয়ালগুলো (ভিডিও, ওয়ার্ড ফাইল, পিডিএফ, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ফাইল) প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবেন; যা শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে যে কোনো সময় খুব সহজেই দেখতে ও পড়তে পারবে। এটির মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সবাই উপকৃত হবেন।
পাশাপাশি এটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সংশ্নিষ্টরা প্রয়োজনীয় যে কোনো নোটিশ মোবাইল বার্তার মাধ্যমে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাছে দ্রুত সময়ে পাঠাতে পারবেন। এভাবে করোনার এই মহামারিতে অনলাইন ক্লাসের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ভিন্নধর্মী ও ব্যতিক্রমী ওয়েবসাইট ভিত্তিক ক্লাসরুম। পদ্ধতিটি ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে সফলতাও মিলেছে। এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আগামীতে এই পদ্ধতি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের মাধ্যমে পৃথক ওয়েবসাইট দেওয়া, প্রতিষ্ঠানের জন্য নোটিশ সেকশন, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংযোগসহ ব্যতিক্রমধর্মী বেশকিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে ওয়েবসাইটটির। আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ওয়েবসাইটটি। অনলাইন ক্লাসরুমের সুযোগ পাওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বফঁড়িৎষফবৎঢ়.পড়স এই ওয়েবসাইট ঠিকানায় গিয়ে অঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের ওয়েবসাইট ও ক্লাস রুম কার্যক্রম বুঝিয়ে দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আনিছ আহমদের দিকনির্দেশনায় নিরলস পরিশ্রম করে ব্যতিক্রমী এই কাজটি করেছেন তিন তরুণ। যারা প্রতিষ্ঠানটির খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিছ আহমদ সমকালকে বলেন, 'নিঃসন্দেহে আগামীর বিশ্বে অনলাইননির্ভরতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। করোনার এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মই একমাত্র মাধ্যম। বিষয়টিকে উপলব্ধি করে প্রথমবারের মতো তিন তরুণ অনলাইন ক্লাসের জন্য ব্যতিক্রমী একটি ভিন্নধর্মী ওয়েবসাইট ভিত্তিক ক্লাস রুম তৈরি করেছে। যা ইতোমধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে সফল হয়েছি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এর মাধ্যমে শিক্ষা খাতে একটি আমূল পরিবর্তন আসতে পারে।'
তরুণ উদ্ভাবক আশরাফ রেজা সমকালকে বলেন, 'করোনার কারণে প্রায় চার মাস বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কিছু প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের মাধ্যমে ক্লাস চালু করলেও সেখানে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বকীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকদের কয়েকদিন আগের টিউটোরিয়ালগুলোও খুঁজে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত বেগ পেতে হচ্ছে। আছে ইন্টারনেটের গতির তারতম্য। ফলে সিংহভাগ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে অনলাইন ভিডিও ক্লাস থেকে। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অনলাইন ক্লাস রুমের মতো ব্যতিক্রমী ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে ঘরে বসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দৈনন্দিন পাঠ্যক্রম কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।' নূর উদ্দিন বলেন, 'করোনাকালীন দেশের শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ব্যতিক্রমী একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি আমরা। প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক পৃথক প্যানেল, অনলাইনে ফি গ্রহণ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রদানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরিচালনা করার পুরো পদ্ধতি প্রদান করা হবে। তৈরি করা ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষকদের পাশাপাশি উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এটির মাধ্যমে করোনার এমন সময়ে স্বস্তি মিলবে সবার মাঝে।' হায়দার আলী বলেন, 'দেশের যে কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হেলথ ইনস্টিটিউটসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পৃথক পৃথক ওয়েবসাইট দেব। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নির্ধারিত নোটিশ প্রকাশের জন্য পাবেন নোটিশ সেকশন। ওয়েবসাইটে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংযোগেরও সুযোগ পাবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।' এর আগে এই তিন তরুণ চসিক পরিচালিত ৭৮টি স্কুল-কলেজের ফলাফল ও ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে প্রকাশের একটি সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেন; যা সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন