করোনার প্রভাবে ২২ দিন বন্ধের পর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি আদাবোঝাই ট্রলার এসেছে। শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে দু’জন ব্যবসায়ীর কাছে পণ্যবোঝাই ট্রলারটি ঘাটে এসে ভিড়ে।

এর আগে গত ২৫ জুন মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরে কয়েকজন মাঝিমাল্লার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে মংডু থেকে গত ৩ জুলাই পর্যন্ত পণ্যবোঝাই ট্রলার এসেছিল। মূলত মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব এই দুই জায়গা থেকে পণ্যের চালান এসে থাকে।  

 বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দরের ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন চৌধুরী জানান, ‘২২ দিন পর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি পণ্যবোঝাই ট্রলার এসেছে। তবে ট্রলারে কি পণ্য রয়েছে সেটি না দেখে বলা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা আইজিএম জমা দিলে রোববার রাজস্ব প্রদান করে আমদানীকৃত পণ্য খালাস ও সরবরাহ করা হবে।  

এদিকে শুক্রবার সন্ধায় আমদানিকারক আবু ছালেকের ৬০ টন ও নাছির উদ্দিনের কাছে ৬০ টন মোট ১২০ টনের একটি আদাবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দর জেটিতে এসে পৌঁছায়। অনেক দিন পর বন্দরের জেটিতে পণ্যবোঝাই ট্রলা আসায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।  

এ বিষয়ে আমদানিকারক আবু ছালেক জানান, ‘দীর্ঘদিন পর মিয়ানমার থেকে ১২০ টন (১ লাখ ২০ হাজার কেজি) আদাবাহি একটি ট্রলার আসে। এর মধ্যে তার ৬০ টন রয়েছে। বাকিগুলো অন্য এক ব্যবসায়ীর। কোরবানির সময়ে বিশেষ করে আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার প্রভাবে সবকিছু থমকে আছে।’  

তিনি বলেন, মিয়ানমারে কিনে রাখা শত শত টন আদা আকিয়াব বন্দরে রয়েছে। এগুলো আনা যাচ্ছিল না। ফলে অনেক ব্যবসায়ীর আদা পচেঁ গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেখানে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় বন্দর লকডাউন ছিল।

 টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দীন জানান, সেদেশে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন বন্ধের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় আদাবোঝায় একটি ট্রলার এসেছে। এসব আদা আমদানি করেছেন আবু ছালেক ও নাছির উদ্দীন নামক দুই ব্যবসায়ী। এসব পণ্য আগামী রোববার রাজস্ব প্রদান করে খালাস ও সরবরাহের প্রক্রিয়া চলবে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ৩ জুলাই মিয়ানমার মংডু এবং গত ২৫ জুন আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থল বন্দরে পণ্য এসেছিল। এর পর থেকে আর কোন পণ্যবোঝায় ট্রলার বন্দরে আসেনি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব থেকেই মূলত পণ্য আসে। গত ২৫ জুন আকিয়াব বন্দরে কয়েকজন মাঝিমাল্লার করোনা পাওয়া গেছে। এরপরই সেখানে লকডাউন শুরু হলে পণ্যের চালান আসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩ জুলাই মংডু লকডাউন দেওয়ায় পণ্যবাহী ট্রলার আসছে না। তবে একই দিন সকালে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রলার রওনা দিয়েছিল মিয়ানমারে।

তারা আরও জানান, টেকনাফই হলো মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানির একমাত্র স্থলবন্দর। টেকনাফ স্থলবন্দর হলেও মূলত নদীপথ ব্যবহার করেই এই পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়। এটি একটি আমদানিনির্ভর স্থলবন্দর। মিয়ানমার থেকে কাঠ, চাল, মাছ, শুঁটকি, আদা, হলুদ, আচার, তেঁতুল, চকলেট, মসলা, মৌসুমি ফল আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বেশি যায় প্লাস্টিক পণ্য। এছাড়া সীমিত পরিসরে তৈরি পোশাক, সিমেন্ট এবং ওষুধও রফতানি হয়। মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব থেকেই মূলত পণ্য আসে।

স্থলবন্দরের মাঝি মোহাম্মদ করিম জানান, ‘২২ দিন পর মিয়ানমার আকিয়াব বন্দর থেকে একটি আদাবাহী ট্রলার টেকনাফে এসেছে। কিন্তু মংডু থেকে এখনো পণ্যবোঝাই ট্রলার আসা বন্ধ রয়েছে। মূলত করোনার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’