
ছাদে বিশেষ পদ্ধতিতে আলু চাষ হচ্ছে - সমকাল
পটেটো টাওয়ার। লম্বায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট। প্রস্থে দুই দিকেই তিন ফুট। কাঠ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করতে হয় এ টাওয়ার। টাওয়ারের নিচে বক্সে থাকে মাটি ও জৈবসার। এ মাটিতেই রোপণ করা হয় আলু বীজ। দু'মাসের মাথায় সেখান থেকে অনায়াসে পাওয়া যায় ৪০ কেজি আলু। মাত্র এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করে শহর কিংবা গ্রামে ভবনের ছাদে আলু চাষের এ অভিনব পদ্ধতি সামনে নিয়ে এসেছেন কৃষিবিদ সুভাষ চন্দ্র দত্ত। ছাদ কৃষিতে নববিপ্লব আনতে এই কৃষি কর্মকর্তা তৈরি করেছেন 'পটেটো ডক্টর' নামে একটি অ্যাপসও, যাতে মানুষ সহজেই ছাদে আলু চাষের কলাকৌশল ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রামে ছাদ কৃষিতে নতুন সংযোজন হয়েছে 'পটেটো টাওয়ারে' আলু চাষ।
কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র দত্ত বলেন, "প্রতি বছরই দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। কিন্তু মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বাড়ছে। চট্টগ্রাম শহরে এখন পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিতভাবে অধিকাংশ ভবনের ছাদে মালিকরা কিছু না কিছু চাষাবাদ করছেন। কেউ ফল বাগান, কেউ ফুল বাগান আবার কেউ সবজি বাগান, এমনকি বহু মানুষ মিশ্র বাগানও তৈরি করছেন। তাই শহরে ছাদ কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে 'পটেটো টাওয়ার' পদ্ধতিটি নতুন সংযোজন। ২০১৯ সালে শহরে পরীক্ষামূলকভাবে একটি বাড়ির আলু চাষ করে সফলতা পেয়েছি। চলতি বছর এর পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।"
শহরের মুরাদপুরের বাসিন্দা আসমা হাবিন ফেরিন বলেন, 'সারা বছরই আমার বাসার ছাদে পরিকল্পিতভাবে বহু রকমের শাক ও সবজি বাগান করে থাকি। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত এসে ছাদ বাগান পরিদর্শন করে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গত বছর অন্য সবজির সঙ্গে ছাদে আলু চাষ করেছি পটেটো টাওয়ারে। একটি টাওয়ার থেকে প্রায় ২৮ কেজি আলু পেয়েছি। এবারও পটেটো টাওয়ারে আলু চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে। আমার সারা বছরের টাটকা সবজি ছাদ বাগান থেকেই পাচ্ছি।'
তিনটি ধাপে পটেটো টাওয়ারের মাধ্যমে ছাদে আলু চাষ করা হচ্ছে। প্রথমে এক থেকে দেড় হাজার টাকায় কাঠ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে টাওয়ার তৈরি করতে হয়। তারপর সেই টাওয়ারের নিচে প্লাস্টিকের ড্রাম কিংবা কনটেইনারের বক্সের মধ্যে দুই বস্তা দোআঁশ কিংবা বেলে-দোআঁশ মাটি ও কিছু জৈবসার দিতে হয়।
টাওয়ারের মধ্যে চার বর্গফুট জায়গায় মাটি ও জৈবসার মিশ্রণ করে সেখানে আলু বীজ রোপণ করতে হয়। তার ওপর চার থেকে পাঁট ইঞ্চি করে মাটি মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী পানি ও পরিচর্যা করতে হয় এক থেকে দেড় মাস। তারপর দুই মাসের মাথায় একটি পটেটো টাওয়ার থেকে প্রায় ৪০ কেজি আলু পাওয়া যায়। আর একবার পটেটো টাওয়ারটি তৈরি করলে সেটিতে স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে চার বছর অনায়াসে ছাদে আলু চাষ করতে পারবেন যে কোনো মানুষ। আর ছাদে আলু চাষাবাদ সহজ করতে কলাকৌশল ও পদ্ধতির বিশদ বর্ণনা দিয়ে 'পটেটো ডক্টর' নামে একটি অ্যাপসও ছাদ কৃষকদের জন্য তৈরি করেছেন এ কৃষি কর্মকর্তা। সেই অ্যাপস নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করে তা দেখে ও অনুসরণ করে সহজেই আলু চাষ করা যায়। ছাদে আলু চাষে পটেটো টাওয়ারটি এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই তৈরি করা যায়।
পটেটো ডক্টর অ্যাপসে পটেটো টাওয়ারের মাধ্যমে ছাদে আলু চাষের জন্য ছয় ধরনের উপকরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কাঠ দিয়ে বাক্স তৈরি, ভালো আলু বীজ, ভালো সারযুক্ত মাটি, ভার্মি কম্পোস্ট, কাঠের গুঁড়া বা কোকোডাস্ট ও সার।
চট্টগ্রাম মহানগরে ছাদ বাগান তদারকির দায়িত্বে থাকা পাঁচলাইশ থানার কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান, পটেটো টাওয়ার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন হওয়া আলুর পুষ্টিগুণ অন্য আলু থেকে অনেক বেশি। কারণ এতে প্রচুর প্রাকৃতিক জৈবসার দেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে ভালো আলুর বীজ দিতে হয়। নিয়মিত পরিমিত পানি আলু চাষের জন্য খুব জরুরি। সকাল ও বিকেল পানি দিলেই চলে। গাছে ফুল আসার পর ফল আসবে। এরপর সবুজ গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করলে বোঝা যায় আলু সংগ্রহের সময় হয়েছে। তখনই আলু তুলতে হয়।
মন্তব্য করুন