দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে হত্যার মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতের-১ (সদর)-এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির ওসি রমজান আলী।

চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, আদালতে ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেনি।
দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই চার্জশিটের কপি হাতে পেয়েছি।

চার্জশিটে বলা হয়, ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটনকে ভর্তি পরীক্ষায় জিডিটাল কারচুপির অভিযোগে বহিষ্কার করলে ও নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তৎকালীন ভিসি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ।

অন্যদিকে ভিসির কাছে সুবিধা নেয়ার জন্য ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও বিভিন্ন মতের বিশ্ববিদ্যালয়েরে কিছু ছাত্র স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভিসির পক্ষ নিয়ে একটি নতুন গ্রুপ তৈরি করে ছাত্রলীগের আন্দোলন দমন করার জন্য। এক পর্যায় তারা মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিড়াড়িতরা তাদের আধিপত্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে অডিটোরিয়াম-১ এ ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দুটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে ককটেল বিস্ফোরণ ও এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভীতিকর পরিবেশ সৃর্ষ্টি হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগের অপর গ্রুপের নেতা কর্মীরা শেখ রাসেল হলে গিয়ে আবস্থান নেয়।

হামলাকারীলা চারদিক থেকে শেখ রাসেল হল ঘেরাও করে হামরা চালায়। এক পর্যায তারা শেখ রাসেল হলের কলাপসিবল গেটের তারা ভেঙ্গে আবু ইবনে রজব ও বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনের নেতৃত্বে বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। সেখানে দুই ছাত্র মারা যায়।

সিআইডির দেয়া চার্জশিটে অর্ন্তভুক্তরা হলেন- জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাহাদুর বাজার এলাকার নুরুল ইসলাম মানুর ছেলে আবু ইবনে রজব, কোতয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষেত্রীপাড়া এলাকার সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর সুজাপুর এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে জাকারিয়া জাকির, শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী এলাকার মৃত. আলহাজ্ব দলিল উদ্দিনের ছেলে রশিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ও জেলা শহরের উপশহর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের ছেলে সিরাজুল সালেকিন রানা, স্বেচ্ছাসেব কলীগ নেতা ও রামনগর এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে  মাহমুদুল হাসান ওরফে সিঙ্গেল, ছাত্রলীগ নেতা ও একই এলাকার জুলফিকার আলী স্বপনের ছেলে হারুনুর রশিদ ওরফে রায়হান, ছাত্রলীগ নেতা মুন্সিপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রকিবুল ইসলাম মিথুন, যুবলীগ নেতা ও কসবা (পুলহাট) এলাকার হামিদুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান মাসুম, ছাত্রলীগ নেতা ও রামনগর এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে নাহিদ আহমেদ নয়ন, ঘাষিপাড়া এলাকার আহসানুল্লাহের ছেলে মমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা ও খানসামা উপজেলার পশ্চিম হাশিমপুর এলাকার মৃত. জমির উদ্দিনের ছেলে রুহুল কুদ্দুস জোহা, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার মৃত. আব্দুল আজিজের ছেলে আমিনুল ইসলাম, খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের আশরাফুল আলম, ফুলবাড়ি উপজেলার স্বজনপুকুর গ্রামের ড্রাইভার আব্দুল মজিদের ছেলে নাজমুল হাসান ওরফে মামুন,  সদর উপজেলার কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমান ওরফে বাইট্টার ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে কামু, বড়ইল গ্রামের মৃত. আলাউদ্দিনের ছেলে জুয়েল ইসলাম, উত্তর বালুবাড়ি এলাকার মৃত. রমজান আলীর ছেলে নাছিম আলী, ক্ষেত্রীপাড়া এলাকার মৃত: শরিফুল ইসলাম লালের ছেলে তায়েফ বিন শরীফ, বড়ইল মোল্লাপাড়া এলাকার নজরুল রাজমিস্ত্রীর ছেলে আবু হারেজ ওরফে বুলু, রাজবাড়ী সুখসাগর এলাকার মৃত ফজির উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান, দিনাজপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুইহারি এলাকার সাব্বির আহমেদ সুজন, পুলহাট এলাকার মৃত সাহাবুদ্দিনের ছেলে আরমান বিশ্বাস, উপশহর এলাকার মৃত সিরাজুল মনিরের ছেলে আরাফাত হোসেন, কসবা মিশন রোড এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে সাজু এবং কসবা মিশন রোড এলাকার বদরুল ড্রাইভারের ছেলে আবু সাঈদ শেরু। 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে সংঘর্ষে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া শহীদ নুর হোসেন হলে ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

চলতি বছরের জানুয়ারিতেই নিহত ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনের বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছেলে হারা দুই পরিবারের বাবা-মাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাসহ সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।