- সারাদেশ
- সাভারে এক রাতেই মরে ভেসে উঠল ১০০ টন মাছ
সাভারে এক রাতেই মরে ভেসে উঠল ১০০ টন মাছ

মাছগুলো সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে -সমকাল
সাভারে ‘প্রাণ প্রকৃতি’ নামক একটি মৎস খামারে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের একশ টন মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে সাভারের জিরাবো এলাকার দেওয়ান ইদ্রিস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকার ওই খামারে গিয়ে মরা মাছের স্তুপ দেখা গেছে। পুরো এলাকায় বাতাসে মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
মৎস্য খামারী শহিদুল ইসলাম ব্যাপারী বলেন, প্রায় ৪০ বিঘা জায়গাজুরে খামার করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের চাষ করে আসছি আমরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ খামারের মাছগুলো মরে পানিতে ভেসে উঠতে শুরু করে। এসময় ৩০ থেকে ৪০ জন লোক নিয়ে প্রায় ৩০ টন মাছ অপসারণ করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ টন মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠায় আমাদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তার বড় ভাই শরিফুল ইসলাম ব্যাপারী আলমাস বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে প্রায় ২২ বছর ধরে মাছের চাষ করলেও বিগত দিনে এমন ঘটনা ঘটেনি। কেউ পূর্ব শত্রুতার জেরে পানিতে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। এই খামারে ১০ বছর বয়সেরও বড় বড় মাছ ছিল, যার সব মরে গেছে। দুর্বৃত্তরা শুধু মাছই মারেনি, তারা জেলেসহ অর্ধশতাধিক লোকের জীবিকায় বিষ দিয়েছে।
শরিফুল ইসলাম ব্যাপারী আরও বলেন, আমরা সাভার উপজেলা মৎস অধিদপ্তরের নথিভুক্ত চাষী। ২০১৬ সালে আমরা সাভার উপজেলার সেরা মৎস উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়েছিলাম। কে বা কারা আমাদের স্বপ্নের এই খামারের পানিতে বিষ মিশিয়ে এত বড় ক্ষতি করলো? আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
সাভার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, পুকুরে মাছ মরে ভেসে উঠার খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে পানি পরীক্ষা করে সমস্যা পাওয়া গেছে। এছাড়া অক্সিজেনের পরিমাণ কম এবং এ্যামেনিয়া ও পিএইচ এর পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও পুকুরের মালিকরা অভিযোগ করেন বিষপ্রয়োগে তাদের মাছগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পানিতে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরুপণের কোন যন্ত্রপাতি আমাদের নেই।
তিনি বলেন, সাধারণত পানিতে পিএইচ থাকার কথা সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮, সেখানে পাওয়া গেছে ৯ এর উপরে। অ্যামোনিয়া থাকার কথা .০৫, কিন্তু পাওয়া গেছে .৫ যা অনেক বেশি এবং অক্সিজেন থাকার প্রয়োজন সর্বনিন্ম ৫, সেখানে মাত্র ২ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীরা জানায়, জিরাবো গ্রামের মৃত চান মিয়া বেপারীর পাঁচ ছেলে নিজস্ব ৪০ বিঘার মৎস খামারে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, ব্রিগহেড কার্প, টেংরা, কালবাউশ এবং দেশি পুঁটি মাছের চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু কি কারণে তাদের স্বপ্নের খামারের মাছগুলো মরে গেল? এটা দেখে আমরা সবাই খুবই কষ্ট পাচ্ছি। এছাড়া এতোগুলো মাছ পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরিবেশও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আরা নিপা বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন