দুই ইন্টার্ন চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে এই কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এসময় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

এদিকে হামলার ঘটনায় বিকেলে চমেক ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকা থেকে ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- বুলবুল আহমেদ, কেএম তানভির, ইমন সিকদার, শাহরিয়ার ইসলাম, খোরশেদুল আলম, তৌফিকুর রহমান, সরওয়ার ফারুকি, ওবায়দুল হক, আতাউল্লাহ বুখারি, মাহমুদুল হাসান ও অভিজিৎ দাশ। তারা সবাই চমেকের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। 

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় চমেক ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকা থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারামারির ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক আওয়াল রাফি বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে এবং ছাত্রাবাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ 

এদিকে গ্রেফতারের পর ১১ শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম খায়রুল আমীন তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ূন কবীর বলেন,‘করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে বিগত কয়েকমাস ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়াই আমরা রোগীদের সেবা দিয়েছি। জুলাই মাসে কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দিয়েছেন। এখন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দুইটি গ্রুপ নিজেরা-নিজেরা মারামারি করে ধর্মঘট ডেকেছে। তবে শুক্রবার হওয়ায় তাদের কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবায় কোনো প্রভাব পড়েনি। আন্দোলনরতদের বলেছি রোগীদের দুর্ভোগ হয় এমন কোনো কাজ যাতে না করে। আন্দোলন যাতে নিয়মতান্ত্রিক হয়।’ 

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী সড়কে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং কলেজের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রদের দুই গ্রুপে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে রাতে ছাত্রাবাস সংলগ্ন গুলজার মোড়ে দুই গ্রুপে আরেক দফা মারামারি হয়। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. ওসমান গনি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক সানি হাসনাইন প্রান্তিকসহ তিনজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই চমেক হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়লেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। কিন্তু চমেকের ছাত্রাবাসে তাদের কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় চমেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত আরেক গ্রুপের নেতাকর্মীরা হলে উঠতে গেলে সংঘাত দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া কোনও ছাত্র ছাত্রাবাসে থাকতে পারবে না বলে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা জারি করলে ছাত্ররা হল ত্যাগ করেন। 

চমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব তাজওয়ার রহমান খান বলেন, ‘ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে। হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এর আগে গত ১২ জুলাই চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ ১৩ জন আহত হন। ওইদিন সকালে চমেক হাসপাতালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অনুষ্ঠান শেষে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করার পর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় চমেক ছাত্রলীগের নেতা খোরশেদুল আলম বাদী হয়ে ১১ চিকিৎসকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগের পক্ষের নিয়ন্ত্রণে আছে। ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।