বিলবেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জ। ধানের পর এ জেলার অধিবাসীদের ২য় অর্থকারী ফসল মাছ। এ বছরও ধার দেনা করে মৎস্যচাষীরা মাছ চাষ করেন। পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়েছিলো। কিন্তু বন্যার হানায় গোপালগঞ্জের সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৫ উপজেলার ৬ হাজার ৬৮১টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ৫ হাজার ৫৭৬ জন মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের মোট আয়তন ১ হাজার ৭৩৩ হেক্টর। ভেসে গেছে পুকুরের ৩ হাজার ২১২ টন মাছ। এ ছাড়া পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৬ কোট ৭৯ লাখ টাকার। সর্বমোট এ জেলায় মৎস্য সেক্টরে বন্যায় ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস অফিস আরো জানিয়েছে, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৪৯১টি, টুঙ্গিপাড়ায় ৮৮৮টি, কাশিয়ানীতে ৮৬৭টি, মুকসুদপুরে ৭৮১টি ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭১৪টি পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।

কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস মৎস্যচাষ। তারা নিজের পুঁজি, মহাজন, এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছচাষ করেন। পুকুরে মাছের উৎপাদন ভাল হয়েছিলো। বন্যায় আমার ইউনিয়নের অন্তত ২ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার ইউনিয়নে মৎস্য সেক্টরে কমপক্ষে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকার প্রণোদনা না দিলে মাছ চাষীরা ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবেন না। আমি মৎস্য চাষীদের সহায়তা করার দাবি জানাচ্ছি।

কোটালীপাড়া উপজেলার মাছবাড়ি গ্রামের মৎস্য চাষী দেবদাস সরকার (৬০) বলেন, আমি সব পুঁজি দিয়ে আমার ৬ বিঘার পুকুরে মাছচাষ করেছিলাম। বন্যায় পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমি সরকারের কাছে সহায়তা চাই।

একই গ্রামের মৎস্য চাষী কমলা সরকার (৪৫)বলেন, ধার দেনা করে জমি কিনে এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পুকুর কেটে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। পানিতে বাড়ি ডুবেছে। সবজি নষ্ট হয়েছে। গরু বাছুর নিয়ে কষ্টে আছি। এখন ছেলে-মেয়েকে কিভাবে মানুষ করবো, কিভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে ধার দেনা শোধ করবো, সে দুশ্চিন্তায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। এ অবস্থায় সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা করছি।

একই গ্রামের মৎস্য চাষী উদ্ধব বিশ্বাস ( ৪৬) বলেন, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে আমি সোয়া বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরে ১ লাখ টাকার মাছ ছিল। বন্যা শুরু হলে পুকুরপাড়ে নেট দিয়ে ঘিরে দেই। কিন্তু পানির স্রোতে নেট ছিঁড়ে মাছ বের হয়ে গেছে। 

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, নিম্নজলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় মৎস্য সেক্টরে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করেছি। এটি মৎস্য অধিদপ্তরের মধ্যেমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৎস্য চাষীকে পুকুরে বেশি বেশি করে খাবার দিতে বলছি। এছাড়া পুকুরে গাছের ডাল ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে করে মাছ পুকুরে আশ্রয় নেবে। মৎস্য চাষী কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।