বগুড়ার শাজাহানপুরে কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী সমবেত হয়ে পুলিশের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শত শত এলাকাবাসী শাজাহানপুর থানায় গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে বাঁচাতে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে জনতা শান্ত হয়। এসময় শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল এলাকাবাসীর তরফ থেকে পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে।

কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতিত এলাকাবাসী জানান, আমরুল ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদুল ইসলামের ছেলে পায়েলের (২২) নেতৃত্বে একই এলাকায় ১০-১২ জনের একটি কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হয়েছে। এরা আমরুল ইউনিয়নের রাজারামপুর, পলিপলাশ, গোবিন্দপুর, বড়নগরসহ আশপাশ এলাকায় ইভটিজিং, বিনা কারণে সাধারণ মানুষকে মারপিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। পায়েলের বাবা ফরিদুল ইসলাম আমরুল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার উসকানিতেই তারা এই অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

অভিযোগ রয়েছে- গত বছর পায়েল এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় দুই মাস জেল খেটে বের হয়ে ওই ছাত্রীর বাবাকে মারপিট করে। গত তিন মাস আগে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে স্থানীয়ভাবে আপোষ-মিমাংসা করা হয়। এ ঘটনার পর এক মাস আগে ডা. আফজাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক সেবন করতে থাকে, এতে বাধা দিলে তারা মারধর করে ডা. আফজাল হোসেনকে। দুই সপ্তাহ আগে সিএনজিতে উঠলে ভাড়া চাওয়ায় মানিক নামে এক সিএনজি চালককে মারপিট করে তারা। দেড় মাস আগে পায়েল বাহিনীর সঙ্গে যোগ না দেওয়ায় সবুজ ও শিপন নামে দুই যুবককে মারধর ওই কিশোররা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে শিপনের বাবা সাজেদুর রহমানকেও মারপিট করে তারা। এ ছাড়াও দশ দিন আগে এলাকায় চুরির প্রতিবাদ করায় এলাকার শিহাব ও তার বাবাকে মারধর করে।

দুই মাস আগে তুচ্ছ ঘটনায় পায়েল গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজারামপুর মাঠপাড়া গ্রামের শহিদুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে বাড়ি-ঘরের দরজা, জানালা ভেঙে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এক মাস আগে পলিপালাস গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সালিস বৈঠক বসলে সেখানে পায়েল গ্রুপ গিয়ে মারপিট করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

সর্বশেষ সোমবার রাতে আব্দুল মোত্তালিব ও সাজেদুল হক নামে ২ যুবককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরতর আহত করে। এভাবে একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটাতে থাকে ওই কিশোর গ্যাং। এদের কবল থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী সমবেত হয়ে আজ মঙ্গলবার থানায় যান।

স্থানীয় আমরুল ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল জানান, এই বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এরা কারো কথা মানে না। এদের প্রতিহত করা না হলে এলাকায় প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে থানায় যান।

শাজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দীন বলেন, এলাকাসাসী এসে অভিযোগ দিয়েছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।