চলতি বছর এসএসসি পাস করেছে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৫) ও তার সহপাঠী ইয়াছিন আরাফাত তুহিন (২০)। দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক তাদের। 

প্রেমিক তুহিন সম্প্রতি মীমকে ফুসলিয়ে পরিবারের অজান্তে লক্ষ্মীপুরে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু প্রেমিক তুহিনের মা এই বিয়ে মেনে না নিয়ে মীমকে মারধর শেষে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এতে মেয়েটি প্রতারণার শিকার হয়েছে বুঝতে পেরে বাবার বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ সোমবার রাতে লাশ উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন জান্নাতুল ফেরদাউস পিংকি বাদী হয়ে সোমবার রাতে চাটখিল থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেছেন।

পুলিশ ও মীমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চাটখিল উপজেলার মাধবপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম ও লক্ষ্মীপুরের সৈয়দপুর গ্রামের প্রবাসী আবু মুছার ছেলে ইয়াছিন আরাফাত তুহিন লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়া রামরতন বহুমুখী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পাস করে। একই শ্রেণিতে পড়ার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিহত মীমের চাচা প্রবাসফেরত গাজী আরমান হোসেন মোজাম্মেল জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ইয়াছিন আরাফাত তুহিন মীমকে লক্ষ্মীপুরের আদালতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু এই বিয়ে তুহিনের পরিবার জানলেও মীমের পরিবার জানত না। 

মীমের বড় বোন জান্নাতুল ফেরদাউস পিংকি জানান, তুহিনের ফোন পেয়ে গত শনিবার বিকেলে সুমাইয়া আক্তার মীম নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তুহিনের গ্রামের বাড়ি দত্তপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুরে যায়। সেখানে দু'দিন থাকার পর রোববার রাত ৮টার দিকে তুহিনের মা খাদিজা বেগম মীমকে নিয়ে চাটখিলের মাধবপুরে তাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় তুহিনের মা মীমের পরিবারের লোকজনদের জানান, মীম তার ছেলেকে বিয়ে করেছে। তিনি এই বিয়ে মেনে নেবেন না। তা ছাড়া তুহিনের বাবা প্রবাসে থাকায় তিনি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চলে যান।

এ ঘটনায় সুমাইয়া আক্তার মীম ও তার পরিবার হতবাক হয়ে পড়ে। মীম প্রতারণার শিকার হয়েছে বুঝতে পেরে রাগে- ক্ষোভে ও পরিবারের অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে নিজ শয়নকক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে চাটখিল থানা পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল ওয়াদুদ জানান, সোমবার রাতেই আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য দত্তপাড়ার সৈয়দপুর গ্রামে অভিযান চালিয়েছেন। মামলা দায়েরের খবর শুনে মা-ছেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।